কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে আজ (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্পিডবোট ডুবে যায়। এতে ৯ জন যাত্রীর মধ্যে ৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, একটি শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ শিশুটির নাম নুর আলিশা (৮), যিনি টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে।
দুর্ঘটনাটি ঘটে নাফ নদীর গোলারচর এলাকায়, যেখানে স্পিডবোটটি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পথে ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন থেকে চালকসহ ৯ জন যাত্রী স্পিডবোটে করে টেকনাফে ফিরছিলেন। তবে যাত্রাপথে শাহপরীর দ্বীপের অদূরে গোলারচর এলাকায় ঢেউয়ের ধাক্কায় স্পিডবোটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ডুবে যায়।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় জেলেরা এবং টেকনাফের কোস্টগার্ড সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তৎপরতা শুরু করেন। স্পিডবোটের চালকসহ মোট ৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও, ছোট্ট নুর আলিশা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য কোস্টগার্ডের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও সক্রিয়ভাবে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
নুর আলিশা, সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে, এই দুর্ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছে। শিশুটির পরিবারের জন্য এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কারণ তাদের একমাত্র সন্তান এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে আবহাওয়া বেশ উত্তাল ছিল। নদীর ঢেউয়ের কারণে নৌযানগুলোর চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময়ে নদীতে ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক বেশি ছিল, যা স্পিডবোট ডুবির প্রধান কারণ হতে পারে। আবহাওয়ার অবস্থা এমন অনিশ্চিত থাকায় নৌযানগুলোর চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও কিছু স্পিডবোট সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশোধিত – নিউজ মামলায় হেরেও অন্যের জমি দখল করলেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই এই নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার, স্পিডবোট এবং ছোট নৌযানগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নৌযানের অক্ষমতা এবং আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবকে দায়ী করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য। কোস্টগার্ড ও স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঝিনাইদহে ৩ কৃষকের ২ বিঘা জমির পান বরজ কেটে দিয়েছে দুর্বত্তরা
এই দুর্ঘটনার পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের নিরাপত্তা ও নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল দাবি করছে, নৌযানগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া এবং যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও শোকের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেন্টমার্টিনের একজন জেলে বলেন, “নৌপথের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আমরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছি।”
অনেকে মনে করছেন, নৌযানের ওপর আরও কঠোর নিয়মনীতি আরোপ করা উচিত, বিশেষ করে আবহাওয়ার খারাপ পরিস্থিতিতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা প্রয়োজন। প্রশাসনের উচিত নৌযানগুলোর সক্ষমতা ও যাত্রী বহনের সীমা নির্ধারণ করে নিয়মিত মনিটরিং করা।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮, পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য : র্যাব
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে আবারও একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যেখানে একটি নিষ্পাপ শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র মানুষের প্রাণহানির কারণই নয়, বরং নৌপথের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর না ঘটে।