ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী গৌতম আদানি, যিনি আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর কাছে ৮০ কোটি ডলারের বকেয়া পাওনার দ্রুত পরিশোধের জন্য হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিনিয়োগ ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করে চললেও, তাদের ঋণদাতারা অর্থ নিয়ে চাপ তৈরি করছে বলে জানান তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস এই খবর প্রকাশ করেছে।
চিঠিতে গৌতম আদানি উল্লেখ করেছেন, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি বজায় রেখে চলেছে। তবে ঋণদাতারা তাদের উপর কঠোর হচ্ছে, কারণ তারা এখনও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৮০ কোটি ডলার পাওনা বকেয়া পায়নি। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছেন, যেন দ্রুত এই পাওনা অর্থ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ঝালকাঠির সদর উপজেলা পরিষদের কর্মচারী এস এম মনিরুজ্জামানকে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য বরখাস্ত
আদানি গ্রুপ ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা ১৬০০ মেগাওয়াট, এবং গত জুন মাস থেকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুরোপুরি বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা, তবে এই বকেয়া পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে।
চিঠিতে আদানি আরও বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সঞ্চালনব্যবস্থা তৈরি করতে তারা প্রায় ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে আদানি গ্রুপের প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়াও, আদানি গ্রুপ রূপচাঁদা, মেইজান এবং ফরচুনের মতো ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ভোজ্যতেল ও চাল সরবরাহ করে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেছেন গৌতম আদানি।
চিঠিতে আদানি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং অংশীজনদের কাছ থেকে যে সমর্থন এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছেন, তার জন্য প্রশংসা প্রকাশ করেছেন। আদানি গ্রুপ ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হিসেবে থাকতে চায়।
উর্মিকে প্রথমে ওএসডি করে বদলি করা হয়, পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি, আদানি গ্রুপ এখন আর্থিক চাপে রয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঋণদাতারা আদানি পাওয়ারের উপর অর্থ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওনা ৮০ কোটি ডলারের পরিশোধ দ্রুত না হলে, এটি আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিলগুলো নিয়মিত পরিশোধ করার অনুরোধ করেছে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকে এবং আর্থিক চাপ কিছুটা কমে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে দেশের শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতেও প্রভাব পড়বে।
উর্মিকে প্রথমে ওএসডি করে বদলি করা হয়, পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আদানি গ্রুপের সাথে ২০১৭ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে ঝাড়খন্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনবে এবং তার জন্য অর্থ পরিশোধ করবে। তবে এই চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধে ধীরগতি দেখা দেওয়ায় আদানি গ্রুপের উপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। এই চুক্তি থেকে বাংলাদেশের উপকৃত হওয়া এবং বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু সময়মতো অর্থ পরিশোধ না হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের অংশীদারিত্বে আস্থা সংকট তৈরি হতে পারে।
ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি ফজলে করিম আটক
গৌতম আদানির এই চিঠি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপের ভূমিকা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান অপরিহার্য হলেও, পাওনা অর্থ পরিশোধ না হলে ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হতে পারে। বাংলাদেশের সরকার যদি সময়মতো এই বকেয়া অর্থ পরিশোধ করে, তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে দেশটির উন্নয়ন আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।