বর্তমানে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। বিশেষত, কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউশন ঘিরে গড়ে উঠা বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার গুণগত মানকে হ্রাস করছে এবং শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ কমে গিয়ে তারা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেও পিছপা হচ্ছেন না। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। জামাল হোসেন স্যার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলের একজন শিক্ষক, এমন একজন উদাহরণ যেখানে শিক্ষকদের এমন অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে এসেছে।
মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় বিজিবি’র হাতে আটক সাবেক ভুমিমন্ত্রীকে আদালতে সোপর্দ
বর্তমান সময়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোচিং এবং প্রাইভেট টিউশন বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষকদের অনেকেই তাদের মূল পেশার প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিবর্তে কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট টিউশনে অধিক মনোযোগ দিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে শিক্ষাদান করা হচ্ছে না, ফলে তারা কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
শিক্ষকরা অনেক সময় বিদ্যালয়ের ক্লাসে পুরোপুরি পড়ান না, তারা কৌশলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যান যাতে শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে বাধ্য হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে পড়াশোনা করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না। ফলে কোচিং বা প্রাইভেট টিউশন করতে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি ফজলে করিম আটকঝালকাঠির সদর উপজেলা পরিষদের কর্মচারী এস এম মনিরুজ্জামানকে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য বরখাস্ত
জামাল হোসেন স্যার, যিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলের একজন শিক্ষক, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি তার শিক্ষার্থীদের তার কোচিং সেন্টারে যোগ দিতে বাধ্য করছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, যারা কোচিং সেন্টারে অংশ নেয় না, তাদের ক্লাসে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়। এমনকি অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে যে, তারা কোচিং না করার কারণে পরীক্ষায় নম্বর কম পেয়েছে বা খাতা মূল্যায়নে অবিচার করা হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা শুধু রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলেই নয়, বরং দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপর কোচিংয়ের জন্য চাপ দেওয়া, ক্লাসে পড়াশোনায় অবহেলা করা এবং ফলাফলে বৈষম্য করা এখন প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি ফজলে করিম আটক
অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী অভিযোগ করছেন যে, শিক্ষকেরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রমে মনোযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র কোচিংয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা যদি কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে, যা তাদের উপর মানসিক আঘাত তৈরি করে।
একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেছে, শিক্ষকেরা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের শাসনের নামে শারীরিক নির্যাতন করেন, যা আসলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। শিক্ষার্থীরা এই ধরনের নির্যাতনের ফলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা তাদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে এবং শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কোচিং এবং প্রাইভেট টিউশনের কারণে শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর উপরও অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত কোচিংয়ের খরচ বহন করা খুবই কষ্টকর। অনেক শিক্ষার্থী কোচিং বা প্রাইভেট টিউশন নিতে না পারায় মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা যখন বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে শিক্ষালাভ করতে পারছে না এবং কোচিং সেন্টারগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তখন তারা পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি, কোচিং সেন্টারে অতিরিক্ত সময় ব্যয় এবং পারিবারিক প্রত্যাশা মিলিয়ে তাদের উপর এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হচ্ছে।
উর্মিকে প্রথমে ওএসডি করে বদলি করা হয়, পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিকীকরণ শিক্ষার গুণগত মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যখন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন হয়ে যায়, তখন তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিকভাবে জ্ঞান বিতরণের প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা প্রদান করা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের জন্য প্রলুব্ধ করছেন।
এতে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য, যেমন- মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ, সৃজনশীলতা, এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন, তা ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এই বাণিজ্যিকীকরণ আমাদের সমাজের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এই সমস্যার সমাধানে সরকার, শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় কোচিং নির্ভরতা কমাতে হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। শিক্ষকরা যেন তাদের মূল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন, সে জন্য বিদ্যালয়ের উপর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের উপর কোচিংয়ের জন্য চাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং শিক্ষকদের উচিত ক্লাসে পাঠ্যবিষয় পুরোপুরি এবং সঠিকভাবে পড়ানো। স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় কোচিং নির্ভরতা কমাতে, সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
একজন শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে শিক্ষা প্রদান করা এবং তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা। শিক্ষকেরা সমাজের ভবিষ্যত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু যখন একজন শিক্ষক শিক্ষাদানের পরিবর্তে বাণিজ্যিক মনোভাব নিয়ে কাজ করেন, তখন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। শিক্ষকদের উচিত তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা এবং শিক্ষার্থীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় শিক্ষার গুণগত মান ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। শিক্ষকরা কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এই বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।