নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ফেসবুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে তাঁর একটি মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যের জেরে উর্মিকে প্রথমে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করে বদলি করা হয়, পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, এবং আদালতে মানহানির মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি নিজের ফেসবুকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি রিসেট বাটনের মাধ্যমে দেশের অতীত ইতিহাস মুছে ফেলার বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁর স্ট্যাটাসে বলা হয়, “সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।” উর্মির এই মন্তব্য দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি ফজলে করিম আটক
সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে উর্মির এমন মন্তব্য ১৯৭৯ সালের সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণবিধির সরাসরি লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন লোকপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। এই আচরণবিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক মন্তব্য বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম মন্তব্য করা নিষিদ্ধ।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে গণঅধিকার পরিষদের এক সদস্য আবু হানিফ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, উর্মি ফেসবুকে শহীদ আবু সাঈদ এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সংবিধান অনুযায়ী গঠিত সরকারের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেছেন এবং জনমনে ভীতি সৃষ্টি করেছেন।
ঝালকাঠির সদর উপজেলা পরিষদের কর্মচারী এস এম মনিরুজ্জামানকে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য বরখাস্ত
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মো. ইসমাইল হোসেন একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, এবং মা নাসরিন জাহান ময়মনসিংহের হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ঊর্মি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ২০২২ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
তাপসীর মা নাসরিন জাহান তাঁর মেয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে উর্মি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধ। তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় না। আমার মেয়ে যে কাজ করেছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি।” তাঁর বক্তব্যে উর্মির কর্মজীবনের অনুশোচনার ছাপ পাওয়া যায়।
মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় বিজিবি’র হাতে আটক সাবেক ভুমিমন্ত্রীকে আদালতে সোপর্দ
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি আরও আগে থেকেই সরকারি চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গড়তে চান। ইতিমধ্যে পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য এনওসি নিয়েছেন এবং স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করেছেন। উর্মি বর্তমানে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) বিষয়ে গবেষণার কাজ করছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে উর্মির এই মন্তব্যকে গুরুতর দায়িত্বহীনতা হিসেবে দেখা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে প্রথমে ওএসডি করা হয় এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মানসুর হোসাইন জানিয়েছেন, উর্মির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও গ্রহণ করেছে আদালত, এবং আগামী ২৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহে মুরগীর দোকান দখল করে নিলো বিএনপির সমর্থকরা
উর্মির ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের পক্ষে থাকা কিছু মহল এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে, আবার কিছু মানুষ তাকে সমর্থনও করেছেন। তাঁর সমালোচকরা মনে করেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এমন মন্তব্য করা তাঁর পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির ঘটনাটি বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের বক্তব্যের সীমা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণবিধি কঠোরভাবে পালন করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে যখন তা রাজনৈতিক বা সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্যের সাথে সম্পর্কিত।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বিতর্কিত মন্তব্য এবং তার পরবর্তী বরখাস্তের ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের নীতিমালা নিয়ে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনার ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক এবং সরকারের প্রতি সরকারি চাকরিজীবীদের আনুগত্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে।