র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে যে মধুপুর চৌরাস্তা এলাকায় মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তি অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৬ এর আভিযানিক দলটি শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৮:৩০ মিনিটের সময় মধুপুর চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালায়। এই অভিযানের সময় তারা শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেনকে গ্রেফতার করে।
মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক
গ্রেফতারের সময় মিরাজ হোসেনের কাছ থেকে ৪৬ বোতল ফেন্সিডিল, দুটি মোবাইল ফোন, এবং নগদ ৫২২ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির হেফাজত থেকে জব্দকৃত মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। মিরাজ হোসেনকে পরে ঝিনাইদহ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং র্যাব এর কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব-৬ এর এই অভিযানের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো যে, মাদক চক্রের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম কতোটা কঠোর এবং সক্রিয়। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ এবং আশপাশের এলাকায় মাদক চক্রের কার্যক্রম অনেকটাই সক্রিয়। এই ধরনের অভিযানের মাধ্যমে মাদক চক্রের মূল হোতাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে র্যাব, পুলিশ এবং বিজিবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে এবং মাদকের প্রচলন বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে।
কালীগঞ্জে ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
মাদকের কুপ্রভাব সমাজে ভয়ানক রূপ নিয়েছে। তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদকের সহজলভ্যতার কারণে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ফেন্সিডিলের মতো মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বেশি লক্ষ্য করা যায়। মাদকাসক্তির ফলে পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা তাদের মাদকাসক্ত প্রিয়জনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদকাসক্তির প্রভাব শুধু ব্যক্তির ওপর নয়, সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক অবস্থা নষ্ট করে দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারায়, যা দেশের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও মাদকাসক্তির কারণে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়, যা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে।
ঝিনাইদহে ২৭০ পিস ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতাও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মাদক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করলেই মাদক সমস্যার সমাধান হবে না; সমাজের প্রতিটি স্তরে মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মিরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বাংলাদেশের বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় বিচার হবে। ফেন্সিডিলের মতো মাদকদ্রব্য পাচার ও বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হতে পারে কারাদণ্ডসহ অন্যান্য কঠোর শাস্তি। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে কেউ মাদকদ্রব্য বহন, পাচার বা বিক্রির সাথে জড়িত থাকলে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।
মিরাজ হোসেনের মতো মাদক ব্যবসায়ীরা যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হেরোইনের মতো মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিয়ে তারা একদিকে যেমন সমাজকে ধ্বংস করছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ঝিনাইদহে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ ২ জন আটক, সবজি বোঝায় ট্রাক জব্দ
মাদক সমস্যার সমাধান করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঝিনাইদহে ১০ কেজি গাঁজাসহ ১ মাদক ব্যবসায়ী আটক
মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, মাদকের চাহিদা কমাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তি যদি মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে মাদক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও, মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সীমান্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদক চোরাচালান রোধে স্যাটেলাইট মনিটরিং, ড্রোন ব্যবহার এবং সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল ব্যবস্থা চালু করলে মাদকের প্রবাহ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
সর্বোপরি, মাদক নির্মূলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।