বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের আস্থা বজায় রাখা এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কারণে বর্তমান সরকার মাঝেমধ্যে অসহায় বোধ করছে। এই ছোট ছোট ষড়যন্ত্র একসময় মহা বিপদ ডেকে আনবে। এদের অপসারণ করা না হলে দেশে গণতন্ত্রের পরিপন্থী চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, জনগণই গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের প্রকৃত ধারক। গণতন্ত্র রক্ষা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন, যা জনগণের সম্মতি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের প্রতি বিএনপি’র সমর্থন ও আস্থা ছিল, তবে সরকারের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
“স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর লড়াই করেছি, যেখানে বহু মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন জনগণের জয়ের প্রতীক, এবং এই জয় ইতিহাসে চিরস্থায়ী হবে,” বলেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে, এবং দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা জরুরি।
ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মীকে হারানোর বেদনার কথাও উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “মিরাজুল, দুলাল, পলাশসহ বহু নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনে ঝিনাইদহের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে, যার মধ্যে সাব্বির এবং প্রকৌশলী রাকিবুলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।”
তারেক রহমান বলেন, “ঝিনাইদহের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছে, তা দেশব্যাপী আন্দোলনের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। জনগণের দাবির মুখে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তবে এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন, যা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে।”
ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
তারেক রহমানের ভাষ্যমতে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জনগণের অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন অপরিহার্য। তিনি বলেন, “যারা অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের আত্মত্যাগ সেদিনই সফল হবে, যেদিন দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে।”
“আমরা যদি জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে এই আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা হবে,” বলেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, এখন দেশের মানুষের প্রধান দাবী হচ্ছে নিরাপত্তা, সুষ্ঠু বিচার এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, “প্রতিটি শিশু, শিক্ষার্থী এবং কৃষক তাদের স্বীকৃতি চায়। তাদের এই চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের একটি ন্যায্য এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করতে হবে, যা ধীরে ধীরে দেশের সকল সমস্যা সমাধান করবে।”
যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে সেনাবাহিনীর তরুণ লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) নিহত
তারেক রহমানের ভাষণটি বিএনপি’র দীর্ঘ ১৬ বছর পর আয়োজিত সমাবেশে এক বিশাল গণজোয়ার সৃষ্টি করে। ঝিনাইদহের মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য একত্রিত হয়। বিকেল ৪:৪০ মিনিটে শুরু হওয়া এই ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি ১১ মিনিট ধরে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশটি এতই বিশাল আকার ধারণ করে যে, এটি একটি গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়।
সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বেদখলে ঝিনাইদহের জিকে সেচ প্রকল্পের শত শত বিঘা জমি ও স্থাপনা
বিএনপির নেতারা তাদের বক্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের নানা ব্যর্থতা এবং জনগণের দাবির পক্ষে কথা বলেন। তারা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য জনগণের আন্দোলনের প্রশংসা করেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আসুন, আমরা একটি বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য একসাথে কাজ করি। আমাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।”
তারেক রহমানের বক্তব্যে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, যা ভবিষ্যতে দলটির আন্দোলনকে আরও গতিশীল করবে। তিনি বলেন, “স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে আমরা জয়ী হয়েছি, এখন আমাদের দায়িত্ব হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা।”
ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যে দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা উঠে আসে। তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, তবে এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের বিশ্বাস অর্জন করা এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, যা দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করবে।”
তারেক রহমান আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার জনগণের আস্থার সংকটে রয়েছে এবং তাদের ব্যর্থতার কারণে দেশ ক্রমশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে এবং দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তারেক রহমান সমাবেশে প্রতিজ্ঞা করেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক, উন্নয়নমুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে চাই, যেখানে জনগণের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।”
তারেক রহমানের ভাষ্যমতে, বিএনপি আগামী দিনে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসবে এবং দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।