বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ—ঝিনাইদহের মহেশপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৫৮তম ব্যাটালিয়ন খালিশপুর সদর দপ্তরে বিশাল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে বিজিবি’র কুষ্টিয়া সেক্টর সদর দপ্তরের কমান্ডার কর্ণেল মারুফুল আবেদীন এবং ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান বিচারক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি বিজিবি’র উদ্যোগে আয়োজন করা হয়, যেখানে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য প্রকাশ্যে ধ্বংস করা হয়। অনুষ্ঠানে বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা ৩৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। এসব মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১২,৪৬৩ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল, ১৩ বোতল সিরাপ, ৪৯,০৮০ বোতল মদ, ৭৬ কেজি গাঁজা এবং ৮৭১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।
শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
মাদকদ্রব্য ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, বরং সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে যে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিজিবি’র কমান্ডার কর্ণেল মারুফুল আবেদীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ক্রমাগত অব্যাহত থাকবে এবং আমরা কোনো ধরনের মাদক পাচারকারীকে ছাড় দেব না। তিনি আরও জানান, বিজিবি নিয়মিত সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে যাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের প্রবণতা বন্ধ করা যায়।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে মাদক পাচার একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, বিশেষ করে ফেন্সিডিল, গাঁজা এবং ইয়াবার পাচার একটি পরিচিত ঘটনা। বিশেষ করে ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো মাদক চোরাচালানকারীদের জন্য একটি প্রধান গেটওয়ে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ভারত থেকে ফেন্সিডিল, মদ, এবং অন্যান্য অবৈধ মাদক বাংলাদেশে পাচার হয়, যা স্থানীয় বাজারে বিতরণ করা হয়।
এই মাদকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের পরে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে যুবসমাজের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের সহজলভ্যতা এবং পাচারের কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পরিবারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিজিবি সীমান্ত এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা নিয়মিতভাবে সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে সফলতা অর্জন করেছে। ৫৮ বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত এলাকা জুড়ে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বিজিবি’র এই সফলতা প্রমাণ করে যে, সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে তারা অত্যন্ত সক্রিয় এবং কার্যকর।
বিজিবি শুধু মাদক উদ্ধার করে তা ধ্বংস করেই থেমে নেই, তারা মাদক চোরাচালান চক্রের মূল হোতাদের ধরতেও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার জন্যও বিজিবি নিয়মিত প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। তারা সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের মাদক চোরাচালান রোধে সাহায্য করছে।
হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং বাণিজ্য শুধু ব্যক্তির জীবনেই নয়, সমাজেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাদকের প্রভাব অনেক বেশি। যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এবং পরিবারগুলো এর ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তারা কর্মক্ষমতা হারায় এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ফলে সমাজে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
মাদকাসক্তির কারণে অনেক পরিবারে পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে সন্তানদের শিক্ষা এবং জীবনযাপনেও প্রভাব পড়ে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি শুধু নিজের জীবন ধ্বংস করে না, বরং তার পরিবার এবং সমাজের জন্যও সমস্যা তৈরি করে
ঝিনাইদহে শিক্ষার মান ও কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
বাংলাদেশ সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিতভাবে সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে এবং মাদক চোরাচালানকারীদের ধরতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মাদক নির্মূল করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য পুনর্বাসন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে নয়, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
মাদক সমস্যা সমাধান করতে হলে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিজিবি, পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক চোরাচালানকারীদের দমন করতে যা করছে তা প্রশংসনীয়, তবে মাদকের চাহিদা কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাদকদ্রব্য ধ্বংসের মাধ্যমে বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমাজের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করছে যে, মাদকদ্রব্যের জন্য কোনো স্থান নেই।