বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ— ঝিনাইদহে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিএনপির বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় শহরের পায়রা চত্বরে এই সমাবেশের আয়োজন করেছে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকায় নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশটি হচ্ছে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা উঠে এসেছে, যেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ এবং ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। এছাড়াও, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
এই সমাবেশের পটভূমি বিশেষভাবে গুরুত্ববহ, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ঝিনাইদহে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বড় সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ জানান, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিএনপির যেকোনো সমাবেশের উদ্যোগই পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন এবং জেলেও প্রেরণ করা হয়েছে। এম এ মজিদ আরও উল্লেখ করেন যে, এ ধরনের নির্যাতন ও দমন পীড়নের কারণে ঝিনাইদহ জেলা ও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির নেতাকর্মীরা চরম সংকটের মুখে পড়েছেন।
ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধনঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
তিনি জানান, পুলিশের বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীরা গত কিছু বছরে প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মীকে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার করেছে, আর ১১ হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। বহু নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, যারা হাসিনা সরকারের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।
এই সমাবেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের এই সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এটাকে ‘জীবনের বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ মনে করেন, এই সমাবেশ শুধুমাত্র দলীয় সমর্থকদের সমাবেশই নয় বরং এটি তাদের কাছে লড়াই সংগ্রামের নতুন উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাবে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় নিহত সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবের মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এই সমাবেশে সেই ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে সেনাবাহিনীর তরুণ লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) নিহত
সমাবেশের প্রস্তুতি ঘিরে ঝিনাইদহ শহর ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের ব্যাপারে এখনও কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে তারা তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। তবে, এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।
বিএনপি এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। তবে সমাবেশ ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে, বিগত কয়েক বছরে বিএনপির যেকোনো বড় সমাবেশে পুলিশের বাধা এবং সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। এম এ মজিদ জানান, এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের আগ্রহ যেমন বেশি, তেমনি সরকারের প্রতিরোধের আশঙ্কাও বিরাজ করছে।
সরকারের তরফ থেকে এই সমাবেশের ব্যাপারে কোনো প্রকার মন্তব্য না আসলেও সাধারণ ধারণা হচ্ছে, তারা যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। অন্যদিকে, বিএনপি আশা করছে যে, এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ আরও জোরদার হবে।
বেদখলে ঝিনাইদহের জিকে সেচ প্রকল্পের শত শত বিঘা জমি ও স্থাপনা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ছাত্র জনতার আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে আন্দোলন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় নিহত সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবের ঘটনা সেই আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, এসবই এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি। এই আন্দোলনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে, বিশেষ করে বিএনপি, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী এই লড়াইকে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করছে।
এই সমাবেশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপি আগামী দিনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করতে চায়। স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, এই সমাবেশের সাফল্য ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের পথ তৈরি করবে। বিশেষ করে জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশব্যাপী আরও বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ ও মাষ্টারপ্লান তৈরী
এছাড়া, তারেক রহমানের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তারেক রহমান, যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত এবং বাংলাদেশের আদালত তাকে পলাতক ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় তার ভার্চুয়াল উপস্থিতি এবং বক্তব্য আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই সমাবেশ বিএনপির জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।