ঢাকা মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে ভাড়া নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর মেট্রোরেলের ভাড়ার সঙ্গে তুলনা করে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়া এত বেশি, তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন। ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়া, ভারতের কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই এবং পাকিস্তানের লাহোরের মেট্রোরেলের ভাড়ার তুলনায় কতটা যৌক্তিক, তা বুঝতে হলে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, মাথাপিছু গড় আয় এবং জনগণের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে
১. কলকাতা মেট্রোরেল ভাড়া: সহজলভ্য ও সবার জন্য
কলকাতা মেট্রোরেলের ভাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। কলকাতায় সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ রুপি বা ৬ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা। কলকাতার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, মেট্রোভাড়া সড়ক পরিবহনের চেয়ে কম, যা শহরের অধিকাংশ মানুষের জন্য সহজলভ্য। অর্থাৎ, মেট্রোরেলকে একেবারে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে যাতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্যও এই সেবা সহজলভ্য হয়।
কলকাতায় ২ কিলোমিটার যেতে খরচ হয় ৬ টাকা, যা ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়ার তুলনায় প্রায় তিনগুণ কম। ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য সর্বোচ্চ ১৯ টাকা এবং ২০ কিলোমিটারের বেশি যাত্রায় ৩১ টাকা দিতে হয়। ঢাকার মেট্রোরেলে একই দূরত্বে যাতায়াতের জন্য ভাড়া পড়ছে ১০০ টাকা, যা কলকাতার চার গুণেরও বেশি।
২. দিল্লি মেট্রোরেল: সাশ্রয়ী ভাড়ায় বিশাল নেটওয়ার্ক
দিল্লি মেট্রোরেল, ভারতের রাজধানী শহরের জন্য একটি প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। দিল্লির মেট্রো ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে নিম্নরূপ: প্রথম ২ কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ টাকা, ৫ কিলোমিটারের জন্য ২৫ টাকা, এবং ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩৮ টাকা। ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াতে সর্বোচ্চ ৭৬ টাকা দিতে হয়।
দিল্লির মেট্রোরেল ভাড়া আঞ্চলিক মেট্রোরেল সেবার জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী। মেট্রো নেটওয়ার্কটি শহরের প্রায় সব জায়গায় বিস্তৃত এবং প্রায় ২৭০টি স্টেশন জুড়ে এটি ব্যাপক সেবা প্রদান করে। ঢাকার মেট্রোরেলের তুলনায় দিল্লির মেট্রো ভাড়া বেশ কম এবং সেখানকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঝিনাইদহে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করে খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগ
৩. মুম্বাই মেট্রো: ব্যবসায়িক শহরের ব্যস্ত সড়কে সাশ্রয়ী ভাড়া
মুম্বাই ভারতের ব্যবসায়িক রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মেট্রোরেল ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম। মুম্বাই মেট্রোরেল লাইনের সর্বনিম্ন ভাড়া ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬৩ টাকা। মুম্বাইয়ের মতো ব্যস্ত শহরে এই ভাড়া যথেষ্ট সাশ্রয়ী। কারণ, এটি শুধুমাত্র ধনী ও মধ্যবিত্তের জন্যই নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্যও সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে।
৪. চেন্নাই মেট্রো: প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং কম খরচের সেবা
চেন্নাই মেট্রোরেলের ভাড়াও অন্যান্য ভারতীয় শহরের মতোই সাশ্রয়ী। সর্বনিম্ন ভাড়া ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬৩ টাকা, যা দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত। চেন্নাই মেট্রোরেল পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করে তোলার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কম খরচের এই মেট্রো সেবা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং সহজলভ্য।
৫. লাহোর মেট্রোরেল: সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা
লাহোরের মেট্রোরেল ভাড়া বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ৯ টাকা থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত। পাকিস্তানের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত কম। লাহোরের মেট্রোরেল ভাড়া ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাইয়ের চেয়েও কম, যা স্থানীয় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক
৬. ঢাকা মেট্রোরেল: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
ঢাকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এই ভাড়া কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই এবং লাহোরের মেট্রোরেলের ভাড়ার তুলনায় দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি। ঢাকার মতো শহরে, যেখানে মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম এবং আর্থসামাজিক অবস্থা দুর্বল, সেখানে এই ভাড়া উচ্চমাত্রার।
৭. মেট্রোরেল ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা ও প্রভাব
মেট্রোরেল নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যানজট কমানো। তবে, উচ্চ ভাড়ার কারণে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এটি ব্যয়সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ যাত্রী, যারা প্রতিদিন যাতায়াত করে, তারা সস্তা পরিবহনের বিকল্প হিসেবে মেট্রোরেলকে বিবেচনা করছে না।
উদাহরণস্বরূপ, উত্তরা থেকে মতিঝিল যাতায়াতের জন্য দৈনিক ২০০ টাকা খরচ হবে, যা মাসে ৫২০০ টাকার মতো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে, বাস বা অন্যান্য সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মেট্রোরেল পিছিয়ে পড়ছে।
৮. মেট্রোরেল ব্যবহারে আর্থিক বৈষম্য
মেট্রোরেল ব্যবহারে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। মেট্রোরেলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রকল্প জনগণের জন্য নির্মিত হয়। কিন্তু, অধিক ভাড়া নির্ধারণ করে এটি শুধুমাত্র সামর্থ্যবান মানুষের জন্য সংরক্ষিত হলে, সেটি জনসাধারণের প্রতি একটি বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ না করে সাধারণ মানুষের জন্য এটি দূরূহ করে তুলছে।
৯. মেট্রোরেল ব্যবহারে প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ
উচ্চ ভাড়ার কারণে মেট্রোরেলের ব্যবহার নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, যা যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে। মেট্রোরেলের আরামদায়ক ও দ্রুতগামী সেবা থাকার পরও ভাড়ার কারণে অনেকেই এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। যদি ভাড়া কমানো না হয়, তবে মেট্রোরেল প্রকল্পটি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ৩ রোহিঙ্গা নারীসহ মোট ১৭ জনকে আটক
১০. পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়া কমানোর জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে:
- সরকারি ভর্তুকি বৃদ্ধি: সরকার যদি মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভর্তুকি দেয়, তবে তা জনগণের জন্য আরও সহজলভ্য হবে।
- মেট্রোরেল ব্যবহারকে উৎসাহিত করা: বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য ভাড়া কমানো যেতে পারে, যাতে আরও বেশি মানুষ মেট্রোরেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়।
- যাত্রী সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ: যদি যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে ভাড়া কমানো যেতে পারে।
- সাশ্রয়ী প্যাকেজ বা অফার চালু করা: নিয়মিত যাত্রীদের জন্য মাসিক বা সাপ্তাহিক প্যাকেজ চালু করা যেতে পারে, যাতে তারা কম খরচে যাতায়াত করতে পারেন।
ঢাকার মেট্রোরেলের ভাড়া কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই এবং লাহোরের মেট্রোরেলের তুলনায় বেশ উচ্চ। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যায় না। মেট্রোরেল একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা সবার জন্য সহজলভ্য হওয়া উচিত। উচ্চ ভাড়া এটি জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করছে না। এ জন্য সরকারের উচিত মেট