বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় তিনজন রোহিঙ্গা নারীসহ মোট ১০ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটককৃতদের মধ্যে একজন মাইক্রোবাস চালক এবং একটি পাচারকারী দলের সহযোগী রয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার শ্রীনাথপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ৩ রোহিঙ্গা নারীসহ মোট ১৭ জনকে আটক
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পারাপারের জন্য কুখ্যাত। সীমান্তের এই অংশে পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা প্রায়ই সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষের অবৈধ পারাপারে সহায়তা করে। অনেক রোহিঙ্গা, যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে, জীবিকার তাগিদে এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ভারতের দিকে পাড়ি জমাতে চায়। কিন্তু এই যাত্রা প্রায়শই বিপজ্জনক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্ণেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার বিষয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করে। শনিবার রাতে শ্রীনাথপুর সীমান্তে টহল চলাকালে সন্দেহজনক কিছু লোকের গতিবিধি লক্ষ্য করা হয়। বিজিবি সদস্যরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে তারা পালানোর চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করে ১০ জনকে আটক করা হয়।
ঝিনাইদহে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকদের সংবাদ সম্মেলন
আটককৃতদের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা নারী, যারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে পালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য সাতজন স্থানীয় দালালের সহযোগী বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটককৃত মাইক্রোবাস চালকও পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে বিজিবি।
বিজিবি মহেশপুর সীমান্তে নিয়মিত টহল ও চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ পারাপার রোধে কাজ করছে। সীমান্তে তৎপর পাচারকারী চক্রকে ধ্বংস করতে এবং মানব পাচার বন্ধ করতে বিজিবির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে কাজ করা হচ্ছে।
বিজিবি জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ঝিনাইদহের রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতা প্রদানের দাবীতে ইউনিয়ন ডিজিটাল
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ নিরাপদ জীবনের সন্ধানে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসে। তবে আশ্রয় শিবিরগুলিতে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির কারণে তারা প্রায়ই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। অনেক সময় তারা পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে এবং এই পাচার চক্রের শিকার হয়।
পাচারকারীরা তাদের ভারতে একটি নিরাপদ জীবন এবং কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করে। অনেক সময় রোহিঙ্গা নারীদের পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত করার জন্যও পাচার করা হয়। এই পাচার চক্র ভেঙে দিতে এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, মহেশপুর সীমান্তে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা সাধারণত স্থানীয়দের মধ্য থেকে সহকারী নিয়োগ করে এবং তাদের সাহায্যে রোহিঙ্গাদের ও অন্যান্য অভিবাসীদের সীমান্ত পার করে। সীমান্তে টহল জোরদার করা হলেও কিছু চক্র এখনও সক্রিয় রয়েছে। তবে বিজিবির নিয়মিত তৎপরতার ফলে অনেক চক্রকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
ঝিনাইদহে ৮ হত্যা মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
মহেশপুর সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বিজিবি নিয়মিত টহলের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে ড্রোন ও ক্যামেরা ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে যাতে কেউ পাচারকারীদের ফাঁদে না পড়ে।
মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার জন্য প্রচারাভিযানও চালানো হচ্ছে।
মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি রোধ করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই এই সমস্যা মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সীমান্তে যৌথ টহল এবং তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে পাচারকারীদের কার্যক্রম প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।
শৈলকুপায় সাড়ে ৮’শ কৃষকের মাঝে কীটনাশক বিতরণ
মহেশপুর সীমান্তে তিন রোহিঙ্গা নারীসহ ১০ জনের আটক হওয়ার ঘটনাটি মানব পাচার সমস্যার একটি উদাহরণ মাত্র। মানব পাচারকারীদের চক্র ভেঙে দিতে এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে, স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।