ঝিনাইদহে ওয়ালটন গ্রাহক সুরক্ষা সহায়তা কর্মসূচির আওতায় মৃত ক্রেতার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ এইচ.এস.এস সড়কের ওয়ালটন প্লাজার আয়োজনে সদর উপজেলার পানামী গ্রামের আক্তার শেখের স্ত্রী আসমা খাতুনের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। আক্তার শেখ ওয়ালটন থেকে কিস্তিতে একটি সিলিং ফ্যান কিনেছিলেন, তবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করার আগেই তিনি মারা যান। এই দুঃসময়ে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ওয়ালটন এই অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের খুলনা ডিভিশনের ডিভিশনাল ক্রেডিট ম্যানেজার হুমায়ুন কবির খান হিমু। তিনি বলেন, “ওয়ালটন শুধু পণ্য বিক্রি করে না, ক্রেতাদের সুরক্ষা সহায়তা হিসাবে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশী চাকরির ব্যবস্থাও করে থাকে। আমরা সবসময় আমাদের ক্রেতাদের পাশে থাকতে চাই, এবং তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ঝিনাইদহে বিনামুল্যে গরুর বাছুর বিতরণ
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ এরিয়ার রিজিয়নাল ক্রেডিট ম্যানেজার সাগর আহমেদ, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম লিটন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবি, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং দৈনিক রানার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি বসির আহমেদ, ঝিনাইদহ প্লাজার শাখা ব্যবস্থাপক তোতা মিয়া এবং মৃত ক্রেতা আক্তার শেখের পিতা লুৎফর আলীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ঝিনাইদহে ১ হাজার পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ
ওয়ালটনের এই মানবিক সহায়তা সম্পর্কে উপস্থিত সকলে প্রশংসা করেন। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, “ওয়ালটনের এই উদাহরণ অন্যান্য কোম্পানির জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গ্রাহকদের সুরক্ষা ও তাদের পরিবারের প্রতি এই দায়িত্ববোধ সত্যিই প্রশংসনীয়।” তিনি আরও বলেন, “ওয়ালটনের এই ধরনের সহায়তা কর্মসূচি সমাজের প্রতি একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়, যেখানে কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ব্যবসায়িক লাভের দিকেই মনোযোগ দেয় না, বরং তাদের ক্রেতাদের প্রতি সামাজিক দায়িত্বও পালন করে।”
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার পানামী গ্রামের লুৎফর আলীর ছেলে আক্তার শেখ মাত্র ৬ হাজার টাকায় ওয়ালটনের একটি সিলিং ফ্যান ক্রয় করেছিলেন। তবে ক্রয়ের মাত্র দুই মাসের মধ্যেই কিস্তির টাকা পরিশোধের আগেই তার অকাল মৃত্যু ঘটে। পরিবারটি এই ঘটনার পর অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ওয়ালটন কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য ক্রয়কৃত ক্রেতা যদি কিস্তি পরিশোধের আগে মারা যান, তবে তার পরিবারের সচ্ছলতার জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৩ লক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়। এছাড়াও, পরিবারের কোনো সদস্য এইচএসসি পাশ করলে তাকে ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়।
ওয়ালটনের এই উদ্যোগকে পরিবারটি কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করে। আক্তার শেখের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, “ওয়ালটনের এই সহায়তা আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হয়েছে। আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু ওয়ালটনের এই মানবিক উদ্যোগে আমাদের কিছুটা হলেও আর্থিক সুরক্ষা পেয়েছি। আমরা ওয়ালটনের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
ওয়ালটনের ক্রেডিট ম্যানেজার হুমায়ুন কবির খান হিমু আরও বলেন, “আমরা ক্রেতাদের জন্য শুধু পণ্য বিক্রিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তাদের জীবনের যে কোনো দুঃসময়ে পাশে থাকতে চাই। এজন্যই আমরা এই সুরক্ষা সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছি। আমরা চাই, আমাদের ক্রেতারা যাতে আমাদের পণ্য কিনে শুধু সন্তুষ্টই না হন, বরং তাদের জীবনের যে কোনো সংকটে আমাদেরকে পাশে পান।”
ঝিনাইদহে ভর্তুকি মুল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন
তিনি আরও বলেন, “ওয়ালটনের এই সহায়তা কর্মসূচি কেবল ঝিনাইদহ নয়, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে চালু রয়েছে। আমরা চাই, আমাদের প্রতিটি ক্রেতা যেন আমাদের কাছে সুরক্ষিত বোধ করেন। এজন্য আমরা আমাদের সুরক্ষা সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছি।”
ওয়ালটনের এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে, করোনাকালীন সময়ে যখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সবার জন্যই কঠিন, তখন এই ধরনের সহায়তা অনেক পরিবারকেই আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগগুলো কেবল একটি কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার উদাহরণ নয়, বরং এটি একটি সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্বের প্রতিফলন।
ওয়ালটনের এই উদ্যোগ সমাজের অন্যান্য কোম্পানিগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে। সমাজে অনেক কোম্পানি আছে যারা শুধুমাত্র তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোযোগী, কিন্তু তাদের গ্রাহকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বা তাদের সমস্যার সময় পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে উদাসীন। ওয়ালটনের এই ধরনের সহায়তা কর্মসূচি কোম্পানিগুলোর কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয় যে, সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করলে কেবল ব্যবসায়িক সাফল্যই আসে না, বরং মানুষের মনেও জায়গা করে নেওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে আরও উল্লেখ করা হয়, ওয়ালটন ভবিষ্যতে এই ধরনের সহায়তা কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছে। তারা চান, যেকোনো ক্রেতা যেন কোম্পানির কাছ থেকে কেবল একটি পণ্যই না, বরং এক ধরনের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা পাওয়ার আশ্বাসও পান।
ঝিনাইদহে বিনামূল্যে ৭’শ দরিদ্র অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ
এই ধরনের উদ্যোগকে আরও বেশি করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওয়ালটন যেমন নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করছে, তেমনই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।