ঝিনাইদহে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতা প্রদানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছেন, কিন্তু তাদের চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তাদের দাবি, চাকরির নিরাপত্তা এবং যথাযথ সম্মানজনক বেতন-ভাতার অভাবের কারণে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। শনিবার ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক কল্যাণ সমিতি, ঝিনাইদহ জেলা শাখা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ঝিনাইদহে ৮ হত্যা মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি সনজিত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রাবিকুল ইসলাম রাকিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সরকার কর্তৃক দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি জানিয়ে বলেন, ১৪ বছর ধরে তারা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় যে, তাদের নিয়োগের সময় সরকারী বিধিবিধান মেনে নিয়োগ করা হলেও বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার তাদের বেতন-ভাতা না দিয়ে চুক্তিভিত্তিক শর্তাবলী প্রয়োগ করে একটি অসম, জবরদস্তিমূলক কর্ম-পরিবেশ তৈরি করেছে। তারা দাবি করেন, এ ধরনের চুক্তিপত্র দিয়ে কার্যত তাদের শ্রমকে কম দামে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের জন্য মানসিক ও আর্থিক উভয় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
শৈলকুপায় সাড়ে ৮’শ কৃষকের মাঝে কীটনাশক বিতরণ
পরিচালকরা অভিযোগ করেন যে, বর্তমানে তারা যে বেতন পাচ্ছেন তা ন্যূনতম জীবিকা নির্বাহের জন্যও যথেষ্ট নয়। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে ভাতা দেওয়া হয়, তা সময়মত প্রদান করা হয় না এবং প্রাপ্ত অর্থও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করে। এর মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এসব সেন্টার থেকে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা, যেমন- জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ফরম পূরণ, অনলাইন আবেদনসহ নানা সরকারি সেবা প্রদান করা হয়। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও সেন্টারের পরিচালকরা আজও নিজেদের চাকরি স্থায়ী করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো গ্রামীণ জনগণের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু যারা এ সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় এর কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা দাবি করেন, বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র তাদের জন্য নয়, পুরো ডিজিটাল সেন্টারের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলছে।
ঝিনাইদহে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সহকারীদের বেতন ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
এই পরিস্থিতিতে তারা তাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান এবং তাদের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক থেকে সরিয়ে এনে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার আহ্বান জানান। বক্তারা আরও বলেন, সরকারের উচিত তাদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে তারা ন্যায্য বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পেতে পারেন এবং তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ বজায় থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যরা বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে সেবা প্রদান করে এসেছেন। সেই সময়ে অনলাইন ক্লাস, টিকা নিবন্ধন, বিভিন্ন ফরম পূরণসহ নানা সরকারি সেবা প্রদান করেছেন তারা। এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করেও তারা কোনো সরকারি সহযোগিতা বা প্রণোদনা পাননি।
পরিচালকরা অভিযোগ করেন, তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এবং তারা অবহেলিত বোধ করছেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, যদি সরকারের অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীরা রাজস্ব খাত থেকে বেতন পেতে পারেন, তাহলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা কেন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন?
ঝিনাইদহে শিবির কর্মী শামীম ও আবুজার গিফারী হত্যায় আদালতে মামলা পুলিশের ভূমিকা ও বিচার
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন:
১. চাকরি স্থায়ী করা: ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে তাদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে। এতে তাদের চাকরি নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আরও মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন।
- রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতা প্রদান: তাদের দাবি, অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতো রাজস্ব খাত থেকে তাদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে। এতে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তারা সুষ্ঠু জীবনযাপন করতে পারবেন।
- ন্যায্য মূল্যায়ন ও প্রণোদনা: অতীতের কাজের জন্য তাদের সঠিক মূল্যায়ন এবং প্রণোদনা দিতে হবে। করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিচালকরা বলেন, যদি তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে তারা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। তারা সকল ধরনের সরকারি সেবা প্রদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবির ৭ দিনের রিমান্ডে
এভাবে চলতে থাকলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং এর ফলে গ্রামের মানুষজন সঠিক সময়ে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের দাবি মেনে নিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম যথাযথভাবে চলতে থাকে এবং জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়।