ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ৩ রোহিঙ্গা নারীসহ মোট ১৭ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাতে মহেশপুর উপজেলার সামন্তা, বাঘাডাঙ্গা, এবং খোশালপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। বিজিবির ৫৮ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।:
ঝিনাইদহে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকদের সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ জানান, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে এমন গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করে। এই অভিযান পরিচালনার সময় তিনটি আলাদা স্থান থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে ৩ জন রোহিঙ্গা নারী, একজন দালালের সহযোগী এবং মাইক্রোবাস চালকসহ অন্যান্য সাধারণ মানুষও ছিল। আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
আটককৃত রোহিঙ্গা নারীরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালানোর ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় দালালদের সহযোগিতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এমন কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা মানব পাচারের শিকার হন।
এই ঘটনায় দালাল চক্রের সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। বিজিবি জানায়, আটককৃতদের মধ্যে দালালের সহযোগী হিসেবে কাজ করা একজন মাইক্রোবাস চালকও ছিল, যার মাধ্যমে তারা সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। দালালরা সাধারণত অর্থের বিনিময়ে এসব মানুষদের অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে সহায়তা করে। এই চক্রের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজিবি ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে।
ঝিনাইদহের রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতা প্রদানের দাবীতে ইউনিয়ন ডিজিটাল
বিজিবি আটককৃতদের বিরুদ্ধে মহেশপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে এবং তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আটককৃতদের মধ্যে রোহিঙ্গা নারীদের বিশেষভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে যাতে করে তাদের অবৈধ পারাপারের পেছনে মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা যায়।
মহেশপুর সীমান্তে এমন ঘটনা নতুন নয়। সীমান্ত এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে পারাপার করার চেষ্টা চলে আসছে। তবে সম্প্রতি এই সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা এবং বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে তাদের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার প্রচেষ্টা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজিবি এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ করতে সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি জোরদার করেছে।
ঝিনাইদহে ৮ হত্যা মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেখানে বসবাসের অনিশ্চয়তা, সীমিত সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মসংস্থানহীনতা তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে বাধ্য করছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর থেকে ক্যাম্পগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই দালালদের প্ররোচনায় সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অত্যন্ত দীর্ঘ এবং জটিল। সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পারাপার বন্ধ করা বিজিবি ও বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) উভয়ের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। বিজিবি নিয়মিতভাবে সীমান্তে টহল, নজরদারি এবং অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবুও দালাল চক্রের কারণে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে কিংবা মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে পারাপারের ঘটনা মানব পাচারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। দালাল চক্রের মাধ্যমে যারা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের অধিকাংশই প্রতারণার শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে তারা কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা পাচারের শিকার হন, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের উচিত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শৈলকুপায় সাড়ে ৮’শ কৃষকের মাঝে কীটনাশক বিতরণ
বাংলাদেশ সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা রোধ করতে ক্যাম্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টা বন্ধ করতে আরও কড়া নজরদারি, ক্যাম্পের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দালালদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়ার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিজিবি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালান, মানব পাচার এবং অবৈধ পারাপার রোধ করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন তারা সীমান্তে টহল দেয় এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। তারা শুধু সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা করেই ক্ষান্ত নয়, বরং তারা চোরাচালান এবং মানব পাচারকারীদের দমনেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। দুই দেশই চেষ্টা করছে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। তবে মাঝে মাঝে সীমান্তে অবৈধ পারাপারের ঘটনা এই শান্তি ব্যাহত করে। বিজিবি ও বিএসএফ উভয়েই একযোগে কাজ করে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে। দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সীমান্তে অবৈধ পারাপার, চোরাচালান এবং মানব পাচার রোধ করা সম্ভব।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি কেবল বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সংকট। রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করা, ক্যাম্পে জীবনযাপন এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে, কিন্তু সমস্যাটি এখনও সমাধান থেকে অনেক দূরে।
রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একযোগে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে অবস্থানকালীন নিরাপত্তা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা দরকার। ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং দালালদের দমন করতে হবে। তাছাড়া, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করাও জরুরি।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযান তাদের সাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। তারা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ১৭ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে। তবে এই ধরনের অভিযান আরও জোরদার করতে হবে এবং দালাল চক্রকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে।
ঝিনাইদহে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সহকারীদের বেতন ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
সবমিলিয়ে, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে এই অভিযান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ পারাপার রোধে বিজিবি সর্বদা সজাগ এবং তারা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তবে, এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধে সরকারি পদক্ষেপ আরও জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ এবং রোহিঙ্গারা দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপদে না পড়ে।