ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় সাড়ে ৮’শ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে কীটনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ‘মানুষ-পৃথিবী এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আসুন আমরা একতাবদ্ধ হই’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে, শুক্রবার সকালে শৈলকুপার বারইপাড়া-হাবিবপুর গ্রামের মাঠে এই কীটনাশক বিতরণ করা হয়। এই উদ্যোগটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাঈদ, মুগ্ধ ও ইয়াসিনের স্মরণে গঠিত ‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনটি কৃষকদের ধানের মাজরা পোকা দমনের জন্য এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ঝিনাইদহে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সহকারীদের বেতন ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রোকনুজ্জামান রোকন, কর্মকর্তা মাওলানা ইউনুস আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজকরা জানান, শৈলকুপার ওই এলাকার ৮’শ ৫০ জন কৃষকের মাঝে পদ্মা অয়েল কোম্পানির কীটনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। এই কীটনাশক দিয়ে মোট ৫৬ হাজার শতক জমিতে মাজরা পোকা দমনের ব্যবস্থা করা যাবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা করছেন।
‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশন একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে। সাঈদ, মুগ্ধ এবং ইয়াসিনের স্মরণে গঠিত এই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এদের অবদানকে স্মরণ করে এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। মূলত, গ্রামীণ কৃষকদের সহায়তা প্রদান ও তাঁদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ফাউন্ডেশন কাজ করছে।
ঝিনাইদহে শিবির কর্মী শামীম ও আবুজার গিফারী হত্যায় আদালতে মামলা পুলিশের ভূমিকা ও বিচার
এই কর্মসূচির আওতায়, শুধুমাত্র কীটনাশক বিতরণই নয়, বরং কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিভাবে সঠিকভাবে এই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে, কিভাবে জমির মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে এবং কীভাবে ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধ করতে হবে, এসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
এলাকার কৃষকরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা জানান, মাজরা পোকা ধানের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। পোকা যদি সঠিক সময়ে দমন না করা যায়, তবে ধানের ফলন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে। তাই এই ধরনের সহায়তা তাঁদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন কৃষক, মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের মতো ছোট কৃষকদের জন্য এই সহায়তা খুবই উপকারী। প্রতি বছর মাজরা পোকা আমাদের ধানের বড় ক্ষতি করে, কিন্তু এবার এই কীটনাশক পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হব।”
কৃষকরা আরও জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে প্রতিবছর তাঁদের ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। সরকার ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে তাঁরা যে সাহায্য পান তা যথেষ্ট নয়। তবে, এই ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ তাঁদের নতুন করে আশাবাদী করেছে। এ ধরনের সহায়তা তাঁদের ফসল উৎপাদনে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবির ৭ দিনের রিমান্ডে
এই ধরনের কীটনাশক বিতরণ কর্মসূচি শৈলকুপার কৃষকদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। মাজরা পোকা ধানের শত্রু হিসেবে পরিচিত। এই পোকা ধানের কাণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে পুষ্টি শোষণ করে। ফলে ধানের গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন কমে যায়। মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ধান উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ কৃষকদের মাজরা পোকা দমনে সাহায্য করবে এবং ধানের ফলন বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে করে কৃষকদের আয়ও বাড়বে। এছাড়া, কৃষকরা তাঁদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার উৎপাদন করতে পারবে। ফলে, স্থানীয়ভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
কৃষকদের সঠিক পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগের উপায় শেখানোর ফলে জমির উর্বরতা বজায় থাকবে এবং পরিবেশের ক্ষতিও কম হবে। তাই, এই ধরনের উদ্যোগ শুধুমাত্র ধান উৎপাদন বাড়ানোর জন্যই নয়, বরং পরিবেশের সুরক্ষাতেও অবদান রাখছে।
ঝিনাইদহে একই ঘটনায় পুলিশের দু’ধরনের প্রতিবেদন এ দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচার নিয়ে সংশয়
‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশন এরকম আরও কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাঁরা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তাঁরা শুধুমাত্র কীটনাশক বিতরণ নয়, বরং উন্নতমানের বীজ, সারের প্রাপ্যতা এবং আধুনিক চাষাবাদের পদ্ধতি শেখানোর জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, “আমরা চাই গ্রামের কৃষকরা যেন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতে পারে। তাঁদের আয় যেন বৃদ্ধি পায় এবং জীবনমানের উন্নতি ঘটে। আমরা তাঁদের পাশে থাকবো এবং তাঁদের সহায়তা করতে চাই।”
তাঁরা আরও জানান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা কৃষকদের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চান। উন্নতমানের কৃষি প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য তাঁরা একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও চিন্তা করছেন।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় যে, কৃষকেরা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না। অনেক সময় কৃষকরা সঠিক তথ্যের অভাবে এবং অর্থনৈতিক কারণে সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারেন না। তাই এই ধরনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ থেকে সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। এভাবে একতাবদ্ধ হয়ে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
এলাকার এক শিক্ষক বলেন, “কৃষকরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন করেন। তাঁদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। ফাউন্ডেশন যেটা করছে, সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমাদের সমাজের আরও মানুষকে এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসা উচিত।”
ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যদিও ‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশনের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগ কৃষকদের সহায়তা করছে, তবে সরকারি সহায়তা এই ধরনের উদ্যোগের সফলতা নিশ্চিত করতে আরও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি কৃষকদের জন্য সহজ ঋণ, উন্নত বীজ, সার এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ করে, তাহলে কৃষকরা আরও উন্নত চাষাবাদ করতে পারবে।
কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত কৃষকদের মাঠ পরিদর্শন করে তাঁদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে হবে। কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভূমিকা থাকতে হবে যাতে কৃষকরা তাঁদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়। এর ফলে, কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে এবং পরবর্তী মৌসুমের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগটি শুধু শৈলকুপার কৃষকদের জন্যই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অন্য সকল অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা। কৃষকরা যখন এই ধরনের সহায়তা পায়, তখন তারা আরও উদ্যমী হয়ে কাজ করতে পারে।
আমাদের সবারই উচিত এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো এবং সহযোগিতা করা। কৃষকরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব।
এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু কৃষকদের জীবনমানই উন্নত হবে না, বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ও অর্থনীতিও মজবুত হবে। ‘এসএমওয়াই’ ফাউন্ডেশন এবং এ ধরনের সংগঠনগুলো কৃষকদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।