ঝিনাইদহে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ এক পুলিশ কর্মকর্তা ও আরও দুই জনকে আটক করেছে র্যাব-৬। সোমবার রাত দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে এই অভিযান পরিচালিত হয়। র্যাবের অভিযানে ধরা পড়া ব্যক্তিরা হলেন- হাটগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের এসআই সাজ্জাদুর রহমান, মাগুরার শালিখা উপজেলার সোহের আলী, এবং চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ফারুক হোসেন।
শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবির ৭ দিনের রিমান্ডে
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারা খবর পেয়েছিলেন যে, হাটগোপালপুর এলাকা দিয়ে মাদক পাচার করা হচ্ছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কারে পাচারের সময় ১,২০১ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তদের আটক করা হয়। অভিযানের সময় গাড়িটি মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
আটককৃত তিনজনের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকায় ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। র্যাবের কোম্পানী কমান্ডার মেজর নাঈম হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যেরও এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থাকতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণবিয়ে আয়োজনের অনুমোদন দেয়নি কর্তৃপক্ষ
মেজর নাঈম হোসেন আরও জানান, র্যাব-৬-এর সদস্যরা এলাকায় গোপন নজরদারি চালানোর পর এই অভিযান পরিচালনা করেন। মাদক আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদেরকে ঝিনাইদহ সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে মাদকপাচার এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের মাত্রা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ফেন্সিডিল, ইয়াবা এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্য পাচারের বিষয়টি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হলেও পাচার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাদকপাচার রোধ করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের সাথে জনসাধারণের সহযোগিতাও জরুরি।
এ ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের একজন সদস্য সরাসরি মাদক পাচারের সাথে যুক্ত থাকায় জনগণের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাসের জন্ম নিয়েছে। সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হয় যে তারা অপরাধ দমন করবেন। কিন্তু যখন তারাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত হন, তখন পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।
ঝিনাইদহে মসজিদের জায়গা নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি প্রতিবাদে রাস্তায় জুম্মার নামাজ আদায়
এই ধরনের ঘটনাগুলোর পর প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। মাদক পাচার বা এর সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা জরুরি।
পুলিশ বাহিনীর উপর থেকে জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশনা আসতে হবে যাতে মাদক সম্পর্কিত কোনো অপরাধে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে যৌথ বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার
মাদকপাচার রোধে শুধুমাত্র প্রশাসনের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পরিবার পর্যায়েও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
মাদকপাচার একটি সামাজিক ব্যাধি যা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, সমাজের নৈতিক মূল্যবোধকেও ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়েও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মাদকপাচার রোধে সরকার ও প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার বন্ধ করতে আরও বেশি নজরদারি এবং যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উচিত সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় জনগণকে মাদকপাচার রোধে সচেতন করা।
ঝিনাইদহে একই ঘটনায় পুলিশের দু’ধরনের প্রতিবেদন এ দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচার নিয়ে সংশয়
মাদকাসক্তির বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমকেও আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ মাদকাসক্তি কেবল ব্যক্তির জীবন ধ্বংস করে না, এটি পুরো সমাজকে অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যায়।
ঝিনাইদহে পুলিশের একজন এসআই এবং তার দুই সহযোগীর মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনা বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র মাদকপাচার নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ দমনে সফল হওয়া যায়।