ঝিনাইদহে দুটি নাশকতা মামলায় সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আশরাফকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার দুপুরে র্যাবের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহ সদর থানায় হস্তান্তর করে। গ্রেফতারকৃত আশরাফুল ইসলাম সদর উপজেলার সুরাট গ্রামের বাসিন্দা এবং তার পিতা মৃত লোকমান মন্ডল।
র্যাবের মেজর নাঈম আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে র্যাব সদর উপজেলার পূর্বকৃষ্ণপুর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের সময় চেয়ারম্যান আশরাফুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আগের দুটি নাশকতা মামলার অভিযোগ ছিল, যার মধ্যে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এবং ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম. এ মজিদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
গত ৪ আগস্ট, বিএনপির দলীয় কার্যালয় এবং এম. এ মজিদের বাড়িতে যে অগ্নিসংযোগ, হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে, তা ঝিনাইদহে রাজনৈতিক সহিংসতার একটি গুরুতর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নাশকতার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়, এবং এরপর থেকেই বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা এই ঘটনার পেছনে কারা ছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায়।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানা হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের গুলি, আহত অন্তত ২৫
পুলিশ এবং র্যাবের তদন্তে উঠে আসে যে, সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুটিতে নাশকতার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়, যা তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মুখে ফেলে দেয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা এবং নাশকতার ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। ঝিনাইদহেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সহিংসতার বিষয়গুলো প্রায়শই দেখা যায়, এবং এই ঘটনা সেই ধারাবাহিকতার অংশ বলেই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় এবং দলের নেতৃবৃন্দের বাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। সেদিনের ঘটনায় বিএনপি নেতারা সরাসরি সরকার-সমর্থিত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করেন। তবে ক্ষমতাসীন দল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ঘটনার পেছনে অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে দাবি করে।
এমপি আনার হত্যার আসামী বাবুকে নিয়ে মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান চলছে.
এ ধরনের সহিংসতার পর প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ঝিনাইদহে র্যাব এবং পুলিশ একযোগে কাজ করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালায়। চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের গ্রেপ্তার সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। র্যাবের মেজর নাঈম আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, “আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছি, এবং আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো তদন্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা চাই আইন অনুযায়ী তাকে যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করা হোক।”
গ্রেপ্তারের পর চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ এবং তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়েছে। তার সমর্থকরা স্থানীয় প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগও তুলেছেন। তাদের দাবি, আশরাফুল ইসলাম জনপ্রিয় একজন স্থানীয় নেতা, এবং তার এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রেন লাইন থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
গ্রেপ্তারের পর আশরাফুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তার সমর্থকরা মনে করেন, তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না। তারা তার মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে, স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দও আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে সহায়ক হবে। তবে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে, অনেকেই মনে করছেন যে, নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দোষীদের গ্রেপ্তার করা উচিত, অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করছেন যে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মাত্র।
সুরাট ইউনিয়ন এলাকায় আশরাফুল ইসলাম একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এবং তার এই গ্রেপ্তারের পর সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলি প্রমাণিত হলে তা অবশ্যই একটি বড় ধরনের ধাক্কা হবে।
দেশের দক্ষিনাঞ্চলে রেণু পোনা উৎপাদনে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার ঝিনাইদহের বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি
চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আইনি প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তবে এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। আশরাফুল ইসলামের সমর্থকরা যেভাবে তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে
এছাড়া, নাশকতার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ জনগণের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাসের সংকট তৈরি করতে পারে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ধরনের সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানা হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের গুলি, আহত অন্তত ২৫
জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের উভয় পক্ষ থেকেই সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উপরও জনসাধারণের চাপ তৈরি হওয়া উচিত।
ঝিনাইদহে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের গ্রেপ্তার রাজনৈতিক সহিংসতার একটি গুরুতর উদাহরণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। দুই নাশকতা মামলায় তার নাম উঠে আসায় স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা আর না ঘটে এবং জনগণ নিরাপদে থাকতে পারে।