ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলীসহ ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ডিআরইউ ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এ ধরনের মামলার অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
শাহরিয়ার কবির এবং সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার
ডিআরইউর কার্যনির্বাহী কমিটি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন ঢালাওভাবে মামলা করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে এবং এ ধরনের প্রক্রিয়া সাংবাদিকতার জন্য একটি হুমকি। সংগঠনটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, যদি এই ধরনের মামলা অব্যাহত থাকে, তবে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব রক্ষার জন্য ডিআরইউ বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিনের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই হুমকি প্রদর্শিত হয়েছে।
ডিআরইউর নেতারা বলেছেন, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত হওয়া উচিত। তবে নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা মামলা করা সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। তারা আরও উল্লেখ করেন যে, সাংবাদিকতার পরিবেশকে নিরাপদ ও স্বাধীন রাখতে হবে। কারণ একটি স্বাধীন গণমাধ্যম দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে মজবুত করে তোলে।
সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে যৌথ বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাজধানীর ভাষানটেক থানায় ২৫ জন সাংবাদিককে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনা সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলো মনে করে, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা একটি গুরুতর সমস্যা। এই ধরনের মামলা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং আইন ও গণমাধ্যমের মধ্যকার সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারে।
আইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। এলআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন এই বিবৃতিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ঝিনাইদহে শিক্ষার মান ও কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো জনগণকে তথ্যপ্রদান করা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এ ধরনের মামলা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা দেয় এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিপন্থী হয়ে ওঠে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা করা হলে, তা গণমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং নির্ভীক সাংবাদিকতার পরিবেশ ধ্বংস করতে পারে।
গণমাধ্যম একটি দেশের জনগণের জন্য শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যেখানে সরকারের কার্যক্রম ও নীতি সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়। স্বাধীন সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে না, এটি সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সংকুচিত হলে গণমাধ্যমের এই ভূমিকা ব্যাহত হয়, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।
সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের আগে, অভিযোগের ভিত্তিতে সঠিক প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। ডিআরইউ ও এলআরএফের মত সাংবাদিক সংগঠনগুলোও একই কথা বলেছে। তারা মনে করে, অভিযোগ যদি প্রমাণিত না হয়, তবে অবিলম্বে সেই সাংবাদিকদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
ডিআরইউর পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, যদি পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা অব্যাহত থাকে, তবে সংগঠনটি বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে। এটি কেবলমাত্র সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং পেশাগত স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই নয়, বরং দেশে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যও প্রয়োজন। সাংবাদিক সংগঠনগুলো একসঙ্গে মিলিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে যদি মামলা থেকে সাংবাদিকদের অব্যাহতি না দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার একটি গুরুতর উদাহরণ। এটি শুধু সাংবাদিকদের জন্যই নয়, গোটা সমাজের জন্যও একটি বিপজ্জনক সংকেত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এই ধরনের মামলা সেই স্বাধীনতাকে ব্যাহত করে। ডিআরইউ, এলআরএফসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, সাংবাদিকদের অবিলম্বে অব্যাহতির দাবি তুলেছে।