দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি ও প্রখ্যাত লেখক শাহরিয়ার কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে দু’টি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সানাউল্লাহ এই সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণবিয়ে আয়োজনের অনুমোদন দেয়নি কর্তৃপক্ষ
মোজাম্মেল হক বাবু এবং শ্যামল দত্তকে ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, আর শাহরিয়ার কবিরকে গতকাল সোমবার ঢাকার বনানীতে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মামলাগুলোর অভিযোগ ও তফসিল অনুযায়ী, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে এই মামলাগুলোর প্রকৃত তথ্য বের করার জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
আদালতে শুনানির সময় পুলিশ বলেছে যে, এই মামলাগুলোর তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরি। মামলার প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে সাত দিনের রিমান্ডে রেখে তাদের থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আদালত এই যুক্তি মেনে নিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এই তিনজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে পাঠানোর ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে ও বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শ্যামল দত্ত এবং মোজাম্মেল হক বাবু সাংবাদিক ও মিডিয়া জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। শাহরিয়ার কবির একজন প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক, যিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
সাংবাদিক ও মিডিয়া সংস্থাগুলো এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বিষয়ে অনেকেই বলছেন, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর আঘাত। বিভিন্ন সংগঠন ও মিডিয়া সংস্থাগুলো তাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং এই ধরনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
শাহরিয়ার কবির এবং সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকেও শাহরিয়ার কবিরের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে পাঠানোর বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সংগঠনটি বলছে, শাহরিয়ার কবির একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক, যিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তাকে জড়িত করে হত্যা মামলায় রিমান্ডে পাঠানো সরকারের পক্ষ থেকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেছেন।
এদিকে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এ ঘটনার ওপর গভীর নজর রাখছে। তারা বলছে, যেকোনো গ্রেপ্তার ও রিমান্ড মানবাধিকার লঙ্ঘন না করেই হতে হবে। এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া যাতে যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে। তারা বলছে, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সব সময় মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে এবং শারীরিক বা মানসিক কোনো ধরনের নির্যাতন যাতে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে যৌথ বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও অনেক মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ, যেখানে গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের মতে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে এবং এই গ্রেপ্তার ও রিমান্ড তারই প্রমাণ।
বিরোধী দলগুলো শাহরিয়ার কবিরসহ অন্যদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে এবং এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে। তারা বলছে, এই তিনজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের নামে মিথ্যা মামলা করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে সরকারের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও তদন্তের প্রক্রিয়া কেমনভাবে চলবে এবং এর পরবর্তী ধাপ কী হবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের দাবি, এই তদন্ত প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত হতে হবে। অনেকেই বলছেন, আদালতে নিরপেক্ষ ও সঠিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন না করলে, এটি একটি রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
ঝিনাইদহে একই ঘটনায় পুলিশের দু’ধরনের প্রতিবেদন এ দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচার নিয়ে সংশয়
শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল হক বাবু ও শাহরিয়ার কবিরের গ্রেপ্তার এবং সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর ঘটনা দেশের গণমাধ্যম, রাজনৈতিক মহল, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশাল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ উঠছে। তদন্তের ফলাফল কী দাঁড়ায়, তা দেখতে সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে, বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন।