একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং স্বৈরাচারী সরাকারের সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা।
সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে যৌথ বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার
সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর কয়েকটি থানায় দায়ের হওয়া একাধিক হত্যা মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় শাহরিয়ার কবিরের নাম রয়েছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি ও লেখক শাহরিয়ার কবির এবং স্বৈরাচারী সরাকারের সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা।
এছাড়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব (শিক্ষা ও আইন) মুফতি হারুন ইজাহার চৌধুরী গত ২০ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও ২৩ জনের বিরুদ্ধে। ওই তালিকায়ও শাহরিয়ার কবিরের নাম রয়েছে।
এই গ্রেপ্তার দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক মহল, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠন, এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই ঘটনা দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি হিসাবে দেখানো যেতে পারে, যেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিক সংকট এবং জনমতের চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর কয়েকটি থানায় দায়ের হওয়া একাধিক হত্যা মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় শাহরিয়ার কবিরের নাম আছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে। নূরুল ইসলাম ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর টানা তিনবার পাতানো একক নিরাবাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নূরুল ইসলাম।
শাহরিয়ার কবির আওয়ামীলীগ ও বামদের কাছে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরাকারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশিষ্ট ভূমিকা পালনকারী একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যা যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। তিনি আওয়ামীলীগ ও বামদের কাছে একজন প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী হিসাবে পরিচিত।
ঝিনাইদহে শিক্ষার মান ও কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
স্বৈরাচারী সরাকারের নূরুল ইসলাম ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ, যিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালে রেলপথমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে। কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজনের কারণে তাকে নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কও তৈরি হয়।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নানা রাজনৈতিক চাপ ও বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পরবর্তীতে ৩১ জন মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে এসেছে।
সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের
স্বৈরাচারী সরাকারের শাহরিয়ার কবির ও নূরুল ইসলামের গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনমতের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে, তারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক, অন্যদিকে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই গ্রেপ্তার সরকারকে আরও বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে ফেলতে পারে, কারণ এটি আওয়ামী লীগ সরকারের শক্তির ক্ষয় ও অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ইঙ্গিত বহন করে।
সাধারণ জনগণ, বিশেষত যাঁরা শাহরিয়ার কবির এবং নূরুল ইসলামের মত নেতাদের সঙ্গে আবেগগতভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই গ্রেপ্তারকে অন্যায় বলে উল্লেখ করেছে এবং দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভও সংগঠিত হতে পারে, বিশেষ করে ঢাকায়, যেখানে এই নেতারা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যারা পরবর্তীতে ঘাতক ও দালাল নামে পরিচিত হয়। শাহরিয়ার কবিরসহ অনেক বুদ্ধিজীবী এই গোষ্ঠীগুলির বিচার ও শাস্তির জন্য আন্দোলন করে আসছেন। “একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি” সেই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তির দাবিতে কাজ করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এই বিচারকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শাহরিয়ার কবির ও তার মতো নেতারা এই বিচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়া এবং গ্রেপ্তার, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে শক্তি বিভাজনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলের নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য এবং ক্ষমতার জন্য লড়াই এখন প্রকাশ্যে এসেছে। নূরুল ইসলামের গ্রেপ্তার এই বিভাজনের একটি বড় উদাহরণ হতে পারে। দলের মধ্যে নানা গোষ্ঠী এই সময়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার জন্য লড়াই করছে।
আওয়ামী লীগের এই রাজনৈতিক সংকটের মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী এবং একত্রীকৃত নেতৃত্বের প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে একসঙ্গে বসে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শাহরিয়ার কবির এবং নূরুল ইসলামের গ্রেপ্তার দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রতিফলন। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য একটি কঠিন সময় এবং দেশজুড়ে এর প্রভাব পড়তে পারে। জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষ মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরাকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মিলিয়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর মধ্যে স্বৈরাচারী সরাকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজত ও কারাগারে আছেন বলে জানা যায়।প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া তারা এ যাবৎ নির্বাচন করে নিজেদের নির্বাচিত করেছেন।