ঝিনাইদহে মসজিদের জায়গা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিরোধের প্রেক্ষিতে স্থানীয় মুসল্লিরা ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে রাস্তায় জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন। শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শ পাড়া কচাতলা মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। এলাকাটি একটি মাদ্রাসা ও মসজিদের পাশে অবস্থিত, যেখানে শত শত মুসল্লি খোলা আকাশের নিচে জুম্মার নামাজ আদায় করেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় মসজিদের জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকে। মুসল্লি এবং মসজিদের সাবেক সেক্রেটারি বাকী বিল্লাহ জানান, হাজী আফসার উদ্দিন নামের এক নিঃসন্তান ব্যক্তি তার জীবনের শেষ সময়ে মসজিদের স্থানে একটি পাকা ঘরে বসবাস করতেন। যেহেতু তার কোনও সন্তান ছিল না, তাই তিনি একটি ভিক্ষুক পরিবারকে তার বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং মাঝে মাঝে তাদের সাহায্যও করতেন। পরে ওই ভিক্ষুকের সন্তান হায়দার বড় হলে হাজী আফসার উদ্দিনের কাছ থেকে জোরপূর্বক জমি লিখে নেয়ার চেষ্টা করেন।
হাজী আফসার উদ্দিন এই পরিস্থিতিতে তার ২৩ শতক জমি মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে দান করে দেন। এরপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং সৌদি আরবের অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। পরে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদের পাশে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। তবে, সমস্যা শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন মসজিদ কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি বাকী বিল্লাহর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে হায়দার জোরপূর্বক মসজিদের জমির একটি অংশ লিখে নেন।
এমপি আনার হত্যার আসামী বাবুকে নিয়ে মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান চলছে.
হায়দার সেই জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন এবং মসজিদের ফাঁকা জায়গায় ইজিবাইকের গ্যারেজ নির্মাণ করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, গ্যারেজ থেকে আয় করা অর্থের একটি অংশ মসজিদের মাদ্রাসায় দেবেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য একটি বৈঠক করেন এবং হায়দারকে কিছুদিনের মধ্যে জমি ছেড়ে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেন। হায়দার তখন আদালতে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে ১৪৪ ধারা জারি করান। এরই প্রতিবাদে মুসল্লিরা মসজিদ ছেড়ে রাস্তায় জুম্মার নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রেন লাইন থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তারা মনে করেন যে, মসজিদের জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে থাকা অন্যায় এবং ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী। মুসল্লিরা এই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, তবে তারা তাদের ধর্মীয় স্থান রক্ষায় কোনো ছাড় দিতে নারাজ। এদিকে, এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা স্থানীয় প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে যে, তারা সব পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করছে, যাতে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে না যায়।
এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন যে মসজিদ ও মাদ্রাসার জমি দখল একটি গর্হিত কাজ এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত। অন্যদিকে, কিছু মানুষ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখছেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া হায়দারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিষয়টি রাজনৈতিক উত্তেজনাও সৃষ্টি করেছে, যেখানে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি দখলকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
দেশের দক্ষিনাঞ্চলে রেণু পোনা উৎপাদনে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার ঝিনাইদহের বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি নিয়ে টানাপোড়েনের ফলে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে, মসজিদের মত পবিত্র স্থানের জমি নিয়ে এমন বিরোধ সৃষ্টি হওয়া গভীর উদ্বেগজনক। অনেকেই মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
আইনগত দিক থেকে দেখলে, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে হায়দারের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে। তবে, মুসল্লিরা দাবি করছেন যে এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ এবং এর মাধ্যমে মসজিদের জমি দখলকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ১৪৪ ধারা সাধারণত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জারি করা হয়, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু মুসল্লিদের দাবি অনুযায়ী, এই ধারার অপব্যবহার করে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
স্থানীয় আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের জমি বিরোধ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সমাধান হওয়া উচিত। যদি সত্যিই জমি মসজিদের নামে দান করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি আইনগতভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, যদি কোনো মিথ্যা তথ্য বা দলিল তৈরি করে জমি দখলের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটিরও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এই ঘটনার ফলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। মসজিদ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান, এবং সেই স্থান নিয়ে এমন বিরোধ বা দখলদারির ঘটনা তাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। মুসল্লিরা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি হওয়াকে সহ্য করতে পারছেন না। বিশেষ করে, ১৪৪ ধারা জারি করার পর তাদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে না পারার ঘটনা তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
বিষয়টি ধর্মীয় অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলায় সমাজের আরও বিস্তৃত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ধর্মীয় স্থানের জমি নিয়ে এমন বিরোধ বা সহিংসতার ঘটনা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং শান্তি বিঘ্নিত করে। মুসল্লিদের দাবি, তাদের এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে, তারা আরও বড় ধরনের প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হবেন।
এই পরিস্থিতির একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে সকল পক্ষকে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনা। মসজিদ কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন এবং হায়দারের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে এই জমি বিরোধের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান করা যেতে পারে। একই সঙ্গে, আদালতের মাধ্যমে এই জমির বৈধ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানা হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের গুলি, আহত অন্তত ২৫
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারেন। তারা যদি দ্রুত একটি সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে সক্ষম হন, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে, যদি বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে, মসজিদের জমি নিয়ে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারা যদি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে না পারে, তাহলে এটি শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের মধ্যে অস্থিরতাই সৃষ্টি করবে না, বরং আরও বড় পরিসরে ধর্মীয় ও সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে।