বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। নায়েব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার প্রধান আসামি হিসেবে। এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারকে তার নিজ বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঝিনাইদহ র্যাব-৬ ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর নাঈম আহমেদ। তিনি জানান, নাশকতার মামলার প্রধান আসামি নায়েব আলী তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পেছনে মূল কারণ ছিল গত ৪ আগস্টের একটি রাজনৈতিক সহিংসতা। ওই দিন ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কার্যালয় এবং বিএনপির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়াও, ওই দিন কার্যালয় এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। বিএনপির অভিযোগ অনুযায়ী, এই হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর প্রধান আসামি করা হয় নায়েব আলী জোয়ার্দারকে, যিনি ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই সহিংসতার মাধ্যমে তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ঝিনাইদহে শিক্ষার মান ও কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
নায়েব আলী জোয়ার্দারের গ্রেপ্তার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এ ধরনের সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নির্বাচন-পূর্বকালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ফলে নাশকতা এবং সহিংসতার অভিযোগে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে, একজন সাবেক সংসদ সদস্যের এভাবে গ্রেপ্তার হওয়া বিরল ঘটনা এবং এটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নায়েব আলী জোয়ার্দারের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নেতাদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন, এই গ্রেপ্তার এবং মামলাগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। বিএনপির নেতাদের মতে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
বিএনপির একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “নায়েব আলী জোয়ার্দারকে গ্রেপ্তার করে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে। আমাদের দলীয় কার্যালয় এবং নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, এবং সেই ঘটনার দায় এখন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, নায়েব আলী জোয়ার্দারের গ্রেপ্তার একটি নিয়মিত আইনি প্রক্রিয়ার অংশ। তারা বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “বিচারের মাধ্যমে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। নায়েব আলী জোয়ার্দার সহিংসতায় জড়িত ছিলেন, তাই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।”
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে, দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, এবং পাল্টা অভিযোগ লেগেই থাকে। নির্বাচনী বছরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন।
সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফের বিরুদ্ধে ৫টি হত্যা মামলা
এ ধরনের সহিংস ঘটনা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জনগণের আস্থা কমে গেলে সুষ্ঠু বিচার ও ন্যায়বিচারের দাবি দুর্বল হয়ে পড়ে।
নায়েব আলী জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাকে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ায় নাশকতার অভিযোগ গুরুতর বলে গণ্য করা হয় এবং এমন মামলায় শাস্তির মাত্রা বেশ কড়া। যেহেতু মামলার তদন্ত চলছে, তাই বিচার প্রক্রিয়ার সঠিকতা এবং সুষ্ঠু তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, এ ধরনের রাজনৈতিক মামলা বিচার বিভাগের উপর জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নায়েব আলীর মামলা একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভবিষ্যতে এমন সহিংসতার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সহায়তা করবে। আদালত যদি সঠিক প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে রায় দেয়, তবে এই মামলাটি রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে, এ ধরনের মামলায় দ্রুত বিচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ঝিনাইদহে একই ঘটনায় পুলিশের দু’ধরনের প্রতিবেদন এ দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচার নিয়ে সংশয়
নায়েব আলী জোয়ার্দারের গ্রেপ্তার ও নাশকতার মামলাটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের সহিংস ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নয়, তবে সাবেক একজন সংসদ সদস্যের এভাবে গ্রেপ্তার হওয়া বিরল ঘটনা। এই মামলাটি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা দমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করছেন, বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতার প্রমাণ দিয়ে একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার করবে, যাতে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবণতা কমে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।