ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের জামায়াত নেতা এনামুল হককে হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর আমলী আদালতে নতুন করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার মূল আসামি সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনসহ ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে মোট পাঁচটি হত্যা মামলা দায়ের হলো।
মহেশপুরে গণ পিটুনিতে এক গরু চোর নিহত, আহত-২
এই মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে ঝিনাইদহ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় দুই সাবেক সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ ও শফিকুল আজম খান চঞ্চলসহ আরো কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। মামলার প্রধান অভিযোগকারী নিহত জামায়াত নেতা এনামুল হকের ভাই বিএম তারিকুজ্জামান। তারিকুজ্জামান আদালতে অভিযোগ করেন, তার ভাই এনামুল হককে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর, পরের দিন তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।
এনামুল হক ছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলার জামায়াতের অর্থ সম্পাদক এবং ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী তাজুল ইসলামের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাকে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশের একটি দল অপহরণ করে। অপহরণের একদিন পর, ২৬ জানুয়ারি, কোটচাঁদপুরের নওদাপাড়া গ্রামে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ভাষ্যমতে, এনামুল যৌথ বাহিনীর একটি অভিযানে নিহত হন, কিন্তু পরিবার এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করা হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় আছেন ঝিনাইদহের সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, কোটচাঁদপুর থানার সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, এসআই মিজানুর রহমান, এসআই সৈয়দ আলী এবং কনস্টেবল সমির কুমার। এ ছাড়াও, মামলা করা হয়েছে দুই সাবেক সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ এবং শফিকুল আজম খান চঞ্চলসহ ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এনামুলের অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনে এদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
কোটচাঁদপুর আমলী আদালতের বিচারক বাদীর অভিযোগটি গ্রহণ করে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে বাদীর পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট রুস্তম আলী। কোটচাঁদপুর থানার ওসি মোঃ সৈয়দ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আদেশ থানায় পৌঁছালে নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি রেকর্ড করা হবে।
কালীগঞ্জে জমি বিক্রির কথা বলে টাকা আত্মসাৎ, প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন
সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে এটি নতুন কোনো অভিযোগ নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে চারটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশ কিছু মামলায় অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মিথস্ক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিখোঁজ হয়েছেন বা নিহত হয়েছেন। তবে আলতাফ হোসেন ও তার আইনজীবীরা বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং দাবি করছেন যে, তিনি তার দায়িত্বের বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এনামুল হক একজন প্রভাবশালী স্থানীয় জামায়াত নেতা ছিলেন এবং তার মৃত্যুতে ঝিনাইদহের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। স্থানীয়ভাবে জামায়াতের পক্ষ থেকে এনামুলের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিত বলে দাবি করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, আওয়ামী লীগের নেতারা জামায়াতের শক্তিকে দুর্বল করার জন্যই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত।
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তারা দাবি করে যে, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু অংশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে বিরোধী দল এবং তাদের সমর্থকদের দমন করতে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে। এনামুল হকের ক্ষেত্রে পরিবার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক মহল একই ধরনের অভিযোগ তুলেছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের মতে, জামায়াতের নেতৃত্ব এবং তাদের পরিবারকে টার্গেট করে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেছে যে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশনায় কাজ করছে এবং এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এনামুল হকের হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক তদন্ত এবং বিচার হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিরীহ ব্যক্তিদের টার্গেট করার অভিযোগ রয়েছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ।
এনামুল হকের মামলাটি গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ও কোটচাঁদপুর এলাকায় এই মামলা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আমান আযমী দলটির কোনো প্রতিনিধি নন এবং তার বক্তব্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়।
এ ধরনের মামলাগুলো সাধারণত প্রলম্বিত হয় এবং আদালতের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই, মামলাগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে সঠিক বিচার প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে পারেনি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে যে, এই মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে এবং দায়ীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এই মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। বিচার বহির্ভূত হত্যার প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি
এনামুল হকের হত্যাকাণ্ড এবং সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনে সহায়ক হতে পারে। তবে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সঠিক তদন্ত এবং নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে।