ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের সুড়াপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক নারীসহ তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন সুড়াপাড়া গ্রামের মৃত মকছেদ মোল্লার ছেলে আঙ্গার আলী (৬০), তার ভাইয়ের স্ত্রী হাসিনা খাতুন (৫৫), এবং ভাতিজার স্ত্রী রেশমা খাতুন (৪০)।
এই ঘটনা ঝড়-বৃষ্টির পর ঘটে যখন বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু হয়।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তানভীর হাসান জানান, সুড়াপাড়া গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে ঝড়-বৃষ্টির কারণে আঙ্গার আলীর বাড়ির পেছনের একটি পেঁপে গাছ ভেঙে পড়ে। রোববার রাতে আঙ্গার আলী সেই গাছ ঠিক করতে গেলে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারের সঙ্গে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। রাতে যখন আঙ্গার আলী বাড়ি ফিরে না আসেন, তখন পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করে। পরের দিন সকালে, হাসিনা খাতুন ও রেশমা খাতুন আঙ্গার আলীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এই সময় তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন এবং গুরুতর আহত হন।
সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের
ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদেরও মৃত্যু হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সুড়াপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা বিদ্যুৎ সংযোগের সুরক্ষা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতার গুরুত্বের ওপর আরও একবার আলোকপাত করেছে। ঝড়-বৃষ্টির পরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে তা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে নিজেদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেন।
শৈলকুপায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল চালক নিহত, আহত-১
এক্ষেত্রে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, বিদ্যুৎ তারের সংস্পর্শে আসার পূর্বে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো বেশি জনসচেতনতা প্রচার করা উচিত। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা উচিত, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়াও, বিদ্যুৎ সংযোগের স্থানে তদারকি বাড়ানো ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি
এই ঘটনা স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সরকারের উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
মৃতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামের লোকজনও এ ঘটনায় অত্যন্ত শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছেন যে, ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি এবং যদি যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তারা আরও বলেছেন যে, এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
এ ধরনের ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সতর্কতার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণেরও উচিত হবে বিদ্যুতের তারের সমস্যায় সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সতর্ক থাকা।