সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টার থেকে নিশ্চিত করা হয় যে, এই গ্রেপ্তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতারই একটি অংশ।স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই স্বপ্নগুলো কবর হয়ে গেল রবিউলের মৃত্যুর সঙ্গে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন সালমান এফ রহমান, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী সময় তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি আবারো সক্রিয় হন।
তাঁকে স্বৈরাচার শাসক তাকে জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই দায়িত্বে থেকে তিনি বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যার ফলে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে উন্নয়ন সাধিত হয়।
প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তার নামও আলোচনায় আসে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বাড়তে থাকে। এই গ্রেপ্তারগুলো ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরে।
গত ৫ আগস্ট ।স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর থেকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা এই সময়ে আরও তীব্র হয়েছে। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতো শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার এর একটি প্রমাণ। বিরোধী দলগুলো এ ঘটনাগুলোকে তাদের রাজনৈতিক বিজয়ের হিসেবে দেখছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা এসব গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর পাশাপাশি আরও দুই জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রিয়াজ মাহমুদ আয়নালকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক হত্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে। মেহেদী হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদাবর থানায় এবং রিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় মামলা রয়েছে।
এই গ্রেপ্তারগুলো ক্ষমতাসীন দলকে আরও চাপে ফেলেছে এবং রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এই গ্রেপ্তারগুলো আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিরোধী দলগুলোর দাবি, এই গ্রেপ্তারগুলো মূলত প্রতিহিংসার রাজনীতির অংশ এবং এতে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অস্থিতিশীল।স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি পুনর্গঠন করছে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
শেখ হাসিনার বাধ্যতামূলকভাবে গণভবন ছাড়ার ঘটনা, জাদুঘর ও ইতিহাস
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতো নেতাদের গ্রেপ্তার ।স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং দলের নেতৃত্বে সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এই গ্রেপ্তারগুলো আওয়ামী লীগ , সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো এই পরিস্থিতিকে তাদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তারা দাবি করছে যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান একটি জাতীয় নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। একদিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের তৎপরতায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আরও চাপে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলো তাদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
মাকে বলেছিলেন, “আমরা দেশ বদলাতে যাচ্ছি মা, আমি আসব, তুমি চিন্তা করো না।” কিন্তু সেই আসা আর হলো না।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর গ্রেপ্তার এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র বিরোধের ফলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের জনগণ একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রত্যাশা করছে, যা এই সংকটময় সময়ে একটি সুদূরপ্রসারী সমাধান দিতে পারে।