যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) এই বিতর্কে দুই প্রার্থী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তোলেন। বিতর্কের সময় অনেক তথ্য নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করা হলেও, অনেক ক্ষেত্রে সেই তথ্যগুলো সঠিক ছিল না। নিচে বিতর্কে উপস্থাপিত সত্য-মিথ্যা কিছু বক্তব্য বিশ্লেষণ করা হলো।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে কমলা হ্যারিসের সাক্ষাৎ
বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন মার্কিন কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ একটি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন কমলা হ্যারিস সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি নারী শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেই সময় অনুপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার লাইন ফায়ার হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে বাধ্য
সত্যতা:
এই অভিযোগ আংশিক সত্য। কমলা হ্যারিস সত্যিই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি এর পরদিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সুতরাং, ট্রাম্পের বক্তব্যটি আংশিকভাবে সত্য হলেও পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ পরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল।
আফগানিস্তানে সমরাস্ত্র ফেলে আসা
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, আফগানিস্তানে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ফেলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি অভিযোগ করেন যে, এই সমরাস্ত্র তালেবানদের হাতে পড়েছে।
সত্যতা:
ট্রাম্পের এই তথ্য ভুল। কংগ্রেসে দাখিল করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে ফেলে আসা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মূল্য ৭০০ কোটি ডলারের মতো। ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার নয়। তালেবান সরকার আফগানিস্তানে যে সামরিক সরঞ্জাম উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ছিল, তবে ট্রাম্প যে পরিমাণ অর্থের কথা বলেছেন, তা ভুল।
হাইতির অভিবাসীদের বিড়াল খাওয়ার দাবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে অভিযোগ করেন, হাইতির অভিবাসীরা ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরে প্রবেশ করে বিড়ালসহ পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলছে। তার বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, অভিবাসীরা স্থানীয়দের পোষা প্রাণী চুরি করে খেয়ে ফেলছে।
সত্যতা:
ট্রাম্পের এই দাবি মিথ্যা। স্প্রিংফিল্ড শহরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাইতির অভিবাসীরা স্থানীয়দের পোষা প্রাণী খাচ্ছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই এবং এটি পুরোপুরি মিথ্যা।
বেকারত্বের হার সম্পর্কে কমলা হ্যারিসের বক্তব্য
কমলা হ্যারিস বিতর্কে দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল মহামন্দার পর সর্বোচ্চ।
সত্যতা:
এই তথ্য আংশিক মিথ্যা। ২০২০ সালের এপ্রিলে যখন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল, তখন বেকারত্বের হার ১৪.৮% পর্যন্ত পৌঁছেছিল, যা মহামন্দার পর সর্বোচ্চ। তবে ট্রাম্প যখন ক্ষমতা ছাড়েন, তখন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার নেমে ৬.৪% হয়। সুতরাং, কমলা হ্যারিসের বক্তব্য আংশিকভাবে সঠিক হলেও তিনি পুরো তথ্য দেননি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিসংখ্যান
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে দাবি করেন, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন যে ৮ লাখ ১৮ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলছে, তা ভুয়া এবং ভিত্তিহীন।
সত্যতা:
ট্রাম্পের এই দাবি ভুল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সরকারি সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ৮ লাখ ১৮ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থাটি এই পরিসংখ্যান একাধিকবার যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করেছে। সুতরাং, এই দাবি মিথ্যা।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য
কমলা হ্যারিস বিতর্কে অভিযোগ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সত্যতা:
কমলা হ্যারিসের এই দাবি সঠিক। ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতায় এই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সমঝোতা প্রচেষ্টা
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে দাবি করেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুই হতো না যদি কমলা হ্যারিস পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে সমঝোতার জন্য যথাযথ প্রচেষ্টা চালাতেন। তার দাবি, কমলা হ্যারিস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন এবং এর তিন দিনের মাথায় যুদ্ধ শুরু হয়।
সত্যতা:
ট্রাম্পের এই দাবি মিথ্যা। কমলা হ্যারিস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তবে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ করেননি। এছাড়া, তাদের মধ্যে কোনো সমঝোতা আলোচনার প্রচেষ্টাও হয়নি। সুতরাং, ট্রাম্পের বক্তব্য সঠিক ন
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ভেনেজুয়েলার নেতা মাদুরোর বিমান আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যে বিতর্কে উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি এবং তথ্য নিয়ে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ দেখা গেছে। ট্রাম্প ও হ্যারিস উভয়েরই বক্তব্যের মধ্যে আংশিক সত্যতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন। বিতর্কের সময় সঠিক তথ্য দিয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে।
এই বিতর্কে ট্রাম্প এবং হ্যারিস উভয়েই কিছু ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন এবং তাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। বিতর্কের সময় সঠিক তথ্য দিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করা এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানো নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য