বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তিনি ১০ দিনের ছুটি নিয়ে সোমবার ঝিনাইদহ ছাড়তে বাধ্য হন। অভিযোগের মধ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মদদ দেওয়া, হাসপাতালের খাবার ও কেনাকাটায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও টেন্ডারবাজী উল্লেখযোগ্য।
প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি
ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে মূলত ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে সংশ্লিষ্টতা ও দুর্নীতি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি হাসপাতালের খাবার সরবরাহ এবং ওষুধ কেনাকাটার টেন্ডারে ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়া, হাসপাতালের বিভিন্ন নির্মাণকাজ ও মেরামতে দুর্নীতি করতেও তিনি অভিযুক্ত। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি নিজ স্বার্থ হাসিল করেছেন এবং হাসপাতালের পরিবেশ ও রোগীদের সেবার মানকে বিপর্যস্ত করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম আগে তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল থেকেও দুর্নীতির দায়ে বদলি হয়েছিলেন। কিন্তু ঝিনাইদহে এসে তিনি তার পুরনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন।”
একটি সাম্প্রতিক ঘটনা এই দুর্নীতির বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে তোলে। অভিযোগ অনুযায়ী, রোববার হাসপাতাল এলাকায় সাইকেল স্ট্যান্ডের ইজারার জন্য এক নারী ঠিকাদারের কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এই ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তাকে সতর্ক করে দেন এবং হাসপাতাল ছাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
আমান আযমী দলটির কোনো প্রতিনিধি নন এবং তার বক্তব্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই ডাঃ রেজাউল ইসলাম নানা ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন টেন্ডার, বিশেষ করে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে কারসাজি করতেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, “১৫ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি এই হাসপাতালের খাবার সরবরাহের টেন্ডারের মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা নিচ্ছে। এবছরও রেজাউল ইসলাম কারসাজি করে তাদেরকেই টেন্ডার প্রদান করেন।”
এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা বেশ কয়েকবার ডাঃ রেজাউল ইসলামকে সতর্ক করেছিলেন, তবে কোনো প্রতিকার হয়নি। অবশেষে আন্দোলনের তীব্র চাপে তিনি ছুটি নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলামের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন বলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং তার প্রতি হাসপাতালের কর্মী ও রোগীরা আস্থা রাখছেন।
ঝিনাইদহে জোরপুর্বক জমি দখল করে গাছ কাটার অভিযোগ, থানায় অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মানের অবনতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছিলেন। তাদের উদ্যোগে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপচয় উন্মোচিত হয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা কোনোভাবেই হাসপাতালে দুর্নীতি এবং অনিয়ম মেনে নেব না। আমরা চাই, রোগীরা যেন যথাযথ সেবা পায় এবং তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা কোনো ধরনের অবহেলার শিকার না হয়।”
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের সেবায় নানা ধরনের অব্যবস্থা, যেমন—ওষুধের অপ্রতুলতা, চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, রোগীদের জন্য বিশাল দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এসব সমস্যার কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং যারা আসেন, তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতালের একটি বড় সমস্যা হল খাবার সরবরাহে দুর্নীতি। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার মানহীন এবং অপ্রতুল। অনেক সময় খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে কারসাজি করে নিম্নমানের খাদ্য দেওয়া হয়। এছাড়া, অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন যে, তারা সঠিকভাবে ওষুধ পাচ্ছেন না, এবং হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ সবসময় মজুদ থাকে না। এর ফলে রোগীরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করে।
হাসপাতালে টেন্ডার নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। তত্ত্বাবধায়ক রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি সরকারি টেন্ডারগুলোতে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সুবিধা দিতেন এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তাদেরকে কাজ পাইয়ে দিতেন। এছাড়া, তিনি নিয়মিতভাবে মাসিক ঘুষ গ্রহণ করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই সব কর্মকাণ্ড হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের এই দুর্নীতির ঘটনাগুলো উন্মোচিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন আরও সচেতন হয়েছে। তারা আশা করছেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলামের অধীনে হাসপাতালের সেবার মান উন্নত হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা, হাসপাতালের সেবা এমনভাবে পরিচালিত হবে, যা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ছুটি নেওয়ার পর হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে ঝিনাইদহের জনগণ এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তাদের দাবি, হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনিয়ম আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা হোক।
ঝিনাইদহে প্রতারণার সময় জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে ৩ জন আটক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের জন্য তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবিগুলো মেনে নেবে এবং হাসপাতালের সেবায় কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম আর হবে না। তবে, তাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন।
ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলামের ঝিনাইদহ ত্যাগের ঘটনা শুধুমাত্র একটি দুর্নীতি বা অনিয়মের উদাহরণ নয়, এটি একটি বৃহত্তর সমস্যা এবং এর প্রতিফলন। হাসপাতালের সেবার মানের উন্নয়ন এবং দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই পদক্ষেপ জনস্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে এবং এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি রোধে অনুপ্রেরণা হতে পারে।
জনগণ আশা করছে, হাসপাতালের ভবিষ্যত সেবায় উন্নয়ন হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে, যেখানে রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পেতে সক্ষম হবে।