বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি এবং আন্দোলন করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কলেজ ক্যাম্পাসের অনুকূল পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। রোববার সকালে কেসি কলেজের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের
সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ রক্ষা করা। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, কলেজে যেসব সমস্যা বিদ্যমান সেগুলোর সমাধান করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে প্রধান দাবিগুলি ছিল মেধা ও দারিদ্র্যের ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ, ছাত্র সংসদ পুনঃপ্রবর্তন, কলেজের ক্যান্টিন চালু করা, এবং উন্নয়ন তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিফাত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ হোসেন, কেসি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শিমুল আল মাসুদ, সদস্য সচিব মেহেদি হাসান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম নাঈম মাহমুদ, আব্দুর রহমান এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি আমির খানসহ অন্যান্য ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই তাদের বক্তব্যে শিক্ষার মান বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং ছাত্রদের অধিকার রক্ষার জন্য একসাথে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই স্বপ্নগুলো কবর হয়ে গেল রবিউলের মৃত্যুর সঙ্গে।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই স্বপ্নগুলো কবর হয়ে গেল রবিউলের মৃত্যুর সঙ্গে।
শিক্ষার্থীরা তাদের ১৮ দফা দাবিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল:
- মেধা ও দারিদ্র্যের ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কলেজের হোস্টেলে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে মেধা এবং দারিদ্র্য বিবেচনা করা উচিত। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে হোস্টেলে সিট পায় না, যা তাদের শিক্ষার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
- ছাত্র সংসদ পুনঃপ্রবর্তন: ছাত্র সংসদ একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কেসি কলেজে ছাত্র সংসদ পুনরায় চালু করা উচিত যাতে তারা নিজেদের সমস্যাগুলি নির্ধারণ করতে পারে এবং সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে।
- ক্যান্টিন চালু: শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, কলেজে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা নেই। ক্যান্টিনের অভাবে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না, যা তাদের দৈনন্দিন শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা দাবি করেছেন, অবিলম্বে ক্যান্টিন চালু করা হোক যাতে তারা সহজে খাবার পেতে পারেন।
- ফাঁকা সিটে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি: অনেক সময় ফাঁকা সিট থাকা সত্ত্বেও সেসব সিটে ভর্তি করা হয় না। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, মেধার ভিত্তিতে ফাঁকা সিটগুলোতে ভর্তি করা উচিত।
- উন্নয়ন তহবিলের সঠিক ব্যবহার: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, কলেজের উন্নয়ন তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারা চান, এই তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক এবং এর হিসাব প্রকাশ করা হোক।
- বেতন ও ভর্তির ক্ষেত্রে রশিদ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা: শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেছেন যে, ভর্তির সময় কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে, তার রশিদ দেওয়া উচিত। এর ফলে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে এবং দুর্নীতি কমানো যাবে।
ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজে শিক্ষার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এবং সঠিক শিক্ষার পরিবেশের অভাবে শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও, লাইব্রেরির যথাযথ ব্যবহার এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তারা উল্লেখ করেছেন।
শেখ হাসিনার বাধ্যতামূলকভাবে গণভবন ছাড়ার ঘটনা, জাদুঘর ও ইতিহাস
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়েও কথা বলেন। তারা জানান, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা শিক্ষার পরিবেশের ক্ষতি করে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, ক্যাম্পাসে একটি নিরাপদ এবং সহনশীল পরিবেশ তৈরি করা উচিত যাতে তারা নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। এছাড়া, ক্যাম্পাসে যথাযথ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করারও দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলো নিয়ে কলেজ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে, শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রশাসন তাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত সমাধান নিয়ে আসবে। তারা আরও বলেছেন, যদি তাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন।
শেখ হাসিনার বাধ্যতামূলকভাবে গণভবন ছাড়ার ঘটনা, জাদুঘর ও ইতিহাস
শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন যে, তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এর অংশ হিসেবে তারা পর্যায়ক্রমে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া, তারা স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে তাদের দাবি তুলে ধরার জন্য আরও পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজের শিক্ষার্থীদের এই সংবাদ সম্মেলন শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করেছেন এবং আশা করা যায়, প্রশাসন তাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
মাকে বলেছিলেন, “আমরা দেশ বদলাতে যাচ্ছি মা, আমি আসব, তুমি চিন্তা করো না।” কিন্তু সেই আসা আর হলো না।
শিক্ষার মান উন্নত করা এবং একটি সহনশীল ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও উদাহরণ হতে পারে, যারা শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের ভূমিকা রাখতে চায়।