ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি উদ্যোগ হল কৃষকদের মাঝে বীজ ও সারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ। সম্প্রতি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এই ধরনের একটি কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে মাসকলাই ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ফসলের আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনামূল্যে বীজ, সার এবং অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর বাজারসমূহের পাইকারী ও খুচরা বাজারদর
সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিস চত্বরে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এই কর্মসূচির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান। তাঁর সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম রনি, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসান সাজ্জাদ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আক্তারুজ্জামান মিয়া।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের খরিপ-২ মৌসুমের আওতায় এই প্রণোদনা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হল মাসকলাই এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি খাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, এবং এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন। কৃষকদের জন্য বীজ ও সার বিতরণের পাশাপাশি তাদেরকে নতুন প্রযুক্তি এবং আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে, যা তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
দাম কমল জ্বালানি তেলের, আজ রাত ১২টা থেকে কার্যকর
কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার প্রায় ৩০০ জন কৃষককে মাসকলাইয়ের বীজ ও সার এবং ৭০০ জন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। এই উপকরণগুলি তাদের চাষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এতে তাদের ফসল উৎপাদনের ব্যয় কমবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম রনি বলেন, “এই প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের বীজ ও সার পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি। এর ফলে কৃষকরা কম খরচে বেশি উৎপাদন করতে পারবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”
মাসকলাই বাংলাদেশের অন্যতম প্রয়োজনীয় ডাল ফসল, যা পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, পেঁয়াজ দেশের খাদ্য তালিকার অপরিহার্য উপাদান। মাসকলাই চাষ সাধারণত কম পানি প্রয়োজনীয় এবং এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো হলে পেঁয়াজের মৌসুমী সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের মাসকলাই এবং পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বীজ এবং সার বিতরণের পাশাপাশি কৃষকদের চাষাবাদের কৌশলগত পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে, যাতে তারা উন্নত চাষাবাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হন।
শৈলকুপায় সামাজিক দ্বন্দ্বের বলি ২৫ কৃষকের ১০ হাজার কলাগাছ !
বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে কৃষি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। এর মধ্যে বীজ, সার এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ অন্যতম প্রধান উদ্যোগ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে চায়। সরকারের লক্ষ্য হল কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা প্রদান করে তাদের জীবিকা উন্নত করা। এই ধরনের প্রণোদনা কর্মসূচি কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা দেয় এবং তারা কৃষি উৎপাদনে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে।”
এ ধরনের কর্মসূচি প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার কৃষকরা বলছেন, এই ধরনের প্রণোদনা তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনে এবং তারা নতুনভাবে চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এছাড়া উন্নতমানের বীজ পাওয়ায় ফসলের ফলন ভালো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, “সরকার আমাদের যেসব বীজ এবং সার দিয়েছে, সেগুলো ভালো মানের। এর ফলে আমাদের চাষে খরচ কমেছে এবং আমরা বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারছি।” অন্যদিকে, আরেক কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, “পেঁয়াজের বীজ পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। এই বীজগুলো দিয়ে আমাদের চাষ ভালো হচ্ছে এবং উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছি।”
কালীগঞ্জে ৬’শ কৃষককে পেঁয়াজ বীজ ও সার প্রদাণ
যদিও এই কর্মসূচি কৃষকদের জন্য উপকারী, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক সময় বীজ ও সার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়, যা চাষাবাদের সময়সীমায় প্রভাব ফেলে। এছাড়া, কিছু কৃষক আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন নয়, যার ফলে তারা এই সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে পারে না।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। এছাড়া, সরবরাহ চেইন উন্নত করার জন্য সরকার নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাসকলাই ও পেঁয়াজের বীজ এবং সার বিতরণ কর্মসূচি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জীবিকা উন্নত করতে সহায়ক হবে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগগুলি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ঝিনাইদহের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা মনোনীত হলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ-নবী
এই কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবে, তাদের আবাদ খরচ কমে যাবে এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে। কৃষকদের এমন সহায়তা প্রদান করলে দেশব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবে।