ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, প্রায় ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কাঠ ব্যবসায়ীদের মতে, টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রিত গাছগুলোর প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি ছিল। গোপন টেন্ডার ও কম দর নির্ধারণের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে মাত্র তিনজন দরদাতা অংশগ্রহণ করেছেন এবং তারা একই ব্যাংক থেকে পরপর পেমেন্ট অর্ডার জমা দিয়েছেন। এতে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকত, তবে গাছগুলো আরও বেশি মূল্যে বিক্রি হতো, ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ত। তবে জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন এবং বন বিভাগ নির্ধারিত মূল্যে গাছগুলো বিক্রি হয়েছে।
সিলেটে চিনি চোরাচালান চক্রের হোতা ছাত্রলীগের শীর্ষ ৪ নেতা
এ ঘটনায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এবং এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মত।
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রির একটি বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা পরিষদ শেষ সময়ে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকার গাছ মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কাঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাছগুলোর প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি হলেও তা অনেক কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি:
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় তিনটি প্রধান সড়কের পাশে থাকা ১০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে, যা কাঠের ব্যবসায়ীদের মতে অনেক মূল্যবান। গাছগুলোর মধ্যে মেহগনি, রেইন্টি কড়াই, তেতুল এবং ইপিল ইপিল গাছ রয়েছে। এসব গাছের বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা করা হলেও, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই গাছগুলো মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকায় বিক্রি করা হয়।
ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুর এলাকার একজন ব্যক্তি, রিপন মুন্সী, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গাছগুলোর মালিকানা লাভ করেন। ইতোমধ্যেই তিনি গাছ কাটার কাজ শুরু করেছেন এবং তা এখনো চলমান রয়েছে। তবে কাঠ ব্যবসায়ীদের দাবি, টেন্ডার প্রক্রিয়াটি ছিল গোপন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা অভিযোগ করেন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি ঠিকমতো প্রচার করা হয়নি এবং নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় গাছের মূল্য অনেক কমিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মাত্র তিনজন ব্যক্তি টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন, এবং তারা একই দিনে একই ব্যাংক থেকে পরপর পেমেন্ট অর্ডার জমা দিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে যে, এই টেন্ডারে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি। কাঠ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, যদি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হতো, তাহলে গাছগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি হতো এবং সরকারের আয়ও বেড়ে যেত।
টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী তিনজন হলেন:
- মোঃ হারুন অর রশিদ – যিনি ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৯ টাকা দর দিয়েছেন।
- মোঃ নাছির উদ্দিন – তার দর ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ২১২ টাকা।
- মোঃ রিপন মুন্সী – সর্বোচ্চ দরদাতা, যার নিট দর ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকা।
রিপন মুন্সী এই টেন্ডার জয় করেন এবং তার সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর যোগ করে সর্বোচ্চ দর ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়।
কাঠ ব্যবসায়ীদের মতে, টেন্ডার প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ এবং এতে অনিয়ম হয়েছে। তারা দাবি করেন, প্রকৃত গাছের বাজার মূল্য অনেক বেশি ছিল, যা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী এই টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি এবং টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়নি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টেন্ডার প্রক্রিয়াটি কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য সুবিধাজনক করা হয়েছিল এবং এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝিনাইদহে জোরপুর্বক জমি দখল করে গাছ কাটার অভিযোগ, থানায় অভিযোগ
তবে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে এবং বন বিভাগ গাছের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এছাড়া, টেন্ডারে অংশ নেওয়া তিনজনের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ এলাকার একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী এই ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি এবং এতে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। অনেক ব্যবসায়ী জানান, তারা টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি জানতেন না এবং কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হলে গাছগুলোর দাম অনেক বেশি হতো এবং সরকারও উপকৃত হতো।
শৈলকুপায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল চালক নিহত, আহত-১
টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২০২৩ সালের ২ মে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ৭ মে সভা, ১৯ মে দরপত্র বিক্রয়, ২০ মে দরপত্র দাখিল ও খোলার দিন নির্ধারণ করা হয়। ১৪ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী তিনজন ঠিকাদার ঝিনাইদহ শহরের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে একই দিনে পেমেন্ট অর্ডার (পিও) জমা দেন, যার নম্বর ছিল পরপর ধারাবাহিক। রিপন মুন্সী, হারুন অর রশিদ, এবং নাছির উদ্দিন এই টেন্ডারে অংশ নেন, তবে অভিযোগ রয়েছে যে এই প্রক্রিয়াটি পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং কোনো প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি।
এই গাছ বিক্রি নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, তা স্থানীয় জনগণ ও কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরুর আগেই সড়কের পাশে থাকা বড় গাছগুলো বিক্রি করা হয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেটে ফেলা হয়েছে। সবুজ গাছগুলোর পরিবর্তে এবার শুকনো, পাতা ঝরা ১০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে, যার মধ্যে মেহগনি, তেতুল, রেইন্টি কড়াই এবং ইপিল ইপিল গাছ উল্লেখযোগ্য।
শৈলকুপায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল চালক নিহত, আহত-১
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন যে, এই গাছ বিক্রিতে সম্পূর্ণ অনিয়ম হয়েছে। তাদের মতে, গাছের বাজার মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি এবং এর ফলে সরকারের আয় অনেক কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে এবং প্রতিযোগিতার সুযোগ দিলে গাছগুলো আরও বেশি মূল্যে বিক্রি হতো।
জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, তারা সকল নিয়ম মেনেই টেন্ডার প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন এবং বন বিভাগ নির্ধারিত মূল্যের ভিত্তিতে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় তিনজন অংশ নিয়েছেন এবং যার দর সবচেয়ে বেশি ছিল, তাকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই বিতর্কিত গাছ বিক্রির ঘটনায় সরকারিভাবে কোনো তদন্ত হবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে কাঠ ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় জনগণ চাইছেন, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সরকারিভাবে তদন্ত করা হোক এবং যদি কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সরকারের আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা মনে করেন যে, সঠিক তদন্ত হলে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।