ভারতের মণিপুর রাজ্যে ড্রোন ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় বিদ্রোহীরা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় ৩১ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন এবং ছয়জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একটি আট বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। পুলিশের মতে, এই হামলাটি অশান্ত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সহিংসতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে হামলার জবাবে হামলা শুরু
রোববারের এই হামলায় বিদ্রোহীরা ড্রোন ব্যবহার করে রকেটচালিত গ্রেনেডের ‘হেড’ ফেলে। মণিপুর পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাধারণত যুদ্ধে ড্রোনের মাধ্যমে বোমা ফেলার ঘটনা ঘটে। তবে এই ধরনের ড্রোন হামলা নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণের ক্ষেত্রে সহিংসতার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে। হামলাটি রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের কাছাকাছি এলাকায় ঘটেছে, এবং পুলিশ কুকি বিদ্রোহীদের সন্দেহ করছে।
ডেনিস মেমোরিয়াল গ্রামার স্কুল অ্যানামব্রা ভবন ধসে দু’জন নিহত, অন্যরা হাসপাতালে
২০২৩ সালের মে মাসের শুরুর দিকে, মণিপুর রাজ্যে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মেইতেইরা, যারা মূলত হিন্দু, সমতল অঞ্চলে বসবাস করে এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দাবী করে আসছে, যা তাদের জমির মালিকানা ও সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা প্রদান করবে। মণিপুর হাইকোর্ট এই মর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করার পর কুকিসহ অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। এর ফলস্বরূপ, ৩ মে থেকে রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়।
আগামী তিন দিনে বেশ কয়েকটি প্রদেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে
দাঙ্গার ফলে অন্তত ২০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে, এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই সহিংসতার ফলে জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় নাগরিক অধিকারকর্মীদের মতে, রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে এই জাতিগত বিভেদকে উসকে দিয়েছেন। বিদ্রোহীরা গত বছর মণিপুরের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের একটি অংশ অবরোধ করে রেখেছে।
মণিপুর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই হামলার পেছনে অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ব্যক্তি ও সহায়তা ছিল। এই ধরনের আক্রমণে ড্রোনের ব্যবহার বিদ্রোহীদের প্রযুক্তিগত উন্নতিও নির্দেশ করে। হামলার পর পুলিশ উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিদ্রোহীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
আসামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ ৬ লাখেরও বেশি মানুষ
মণিপুরে ড্রোন হামলার এই ঘটনা সেখানে বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। এটি শুধু ভারত নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মণিপুরের চলমান সংকটের সমাধানে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।