ঢাকায় ‘এক দফা’ আন্দোলন: উত্তাল বিক্ষোভের দিনে বাংলাদেশ
ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এক বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, যা গতকাল (শনিবার) রাজধানীর সড়কগুলিকে অতিক্রম করে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা জনজনে পূর্ণ হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও শহীদ মিনারে সমবেত হন। তরুণদের বিপুল উপস্থিতি আন্দোলনকে আরও জোরালো করে তোলে। স্লোগানে স্লোগানে রাজধানী ও সারা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে।
বিক্ষোভের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী
শনিবারের আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ঢাকাসহ ৩৩টি জেলা ও মহানগরে ছড়িয়ে পড়ে। গাজীপুর ও চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হন এবং কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। সাতটি জেলায় অন্তত ১৩০ জন আহত হন।
শহীদ মিনারে ‘এক দফা’ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু
শহীদ মিনারে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক উপস্থিত হন এবং আন্দোলনকারীদের দাবি শোনেন। স্লোগান উঠে ‘ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান’, ‘পদত্যাগ শেখ হাসিনা’, ইত্যাদি। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে, নাহিদ ইসলাম এক দফা দাবি ঘোষণার মাধ্যমে সরকারের পতনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা চাই সরকার পতন এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ।”
সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা
নাহিদের বক্তব্যের পর, আসিফ মাহমুদ সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। এতে হাসপাতাল, জরুরি সেবা, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন ইত্যাদি পরিষেবাগুলি চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কর-খাজনা, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পরিশোধ না করা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভের মূল মুহূর্তগুলো
বিকেল ১২টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল তিনটার দিকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছান। শহীদ মিনারে সঙ্গীতশিল্পীরা যোগ দেন এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত হন। আন্দোলনকারীরা বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
সন্তানসহ মা-বাবার অংশগ্রহণ
খুরশিদা শিরিন তার পরিবার নিয়ে শহীদ মিনারে যোগ দেন। মায়ের সাথে সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে তিনি আন্দোলনে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে বিনা মূল্যে পানি বিতরণ এবং পেয়ারা খাওয়ার আয়োজন করা হয়।
অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া
এই আন্দোলন বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক সিস্টেমের দাবি আরও জোরালো করে তোলে। সরকারের প্রতিক্রিয়া এখনও পরিষ্কার নয়, তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি চলছে।
প্রতিরোধের মাধ্যমে পরিবর্তনের আহ্বান
আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে সরকার পতনের দাবি জানান এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের উদ্দেশ্য একটি নতুন এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ আর ফিরে আসবে না।
পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নয়ন
বিক্ষোভের পর সারা দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে। আন্দোলনকারীরা তাদের দাবির প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং পরিবর্তনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে আছেন।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।