সোহেল রানা ঃ দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিখ্যাত রাজবাড়ীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে হালি পেঁয়াজ। পুরাতন পেঁয়াজেরপাশাপাশি আগাম
জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভালো দাম পেয়েছে। এখন চাষিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন হালি পেঁয়াজ উত্তোলনে। ভালো দাম থাকায় আগাম হালি পেঁয়াজ
বাজারে আসতে শুরু করেছে।
এ পেঁয়াজ আগে-ভাগে উত্তোলন করায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এবছর ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ উৎপাদন হবে রাজবাড়ী জেলায়।
জেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ চাষিরা মহাব্যস্ত। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করছেন। রোপণকৃত পেঁয়াজ গাছ গুলো বেশ বড় হয়েছে। কেউ নতুন পেঁয়াজ উত্তোলন করে বাজার ধরছেন, আবার শেষ সময়ে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার
করছেন কৃষক । কেউ ক্ষেতে সেচ, কেউ নিরানী, কেউ বা সার, কীটনাশক দিচ্ছেন।
২ সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগে কালুখালীতে ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের
রমজানের আগেই রাজবাড়ীর বাজার ধরবে হালি পেঁয়াজ। বেশির ভাগ মাঠেই পেঁয়াজ উত্তোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। যাদের আগে রোপন করা পেঁয়াজ তাদেরকে রাত জেগে পাহাড়া দিতে হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী বাবু শেখ বলেন, তিনি ৪ পাখি (২২ শতাংশ পাখি) জমিতে পেঁয়াজ রোপন করেছিলেন।
আগাম পেঁয়াজ রোপনের কারণে বাজার ধরতে পেরেছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ২দিন ধরে পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন। এ নতুন পেঁয়াজ ১শত টাকা কেজি বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। এতে তিনি লাভবান।
তবে ২০-২৫দিন পর এ পেঁয়াজ উত্তোলন করলে ৪০-৪৫ মন ফলন হতো। এখন ৩০-৩৫মন ফলন হচ্ছে। মুলত ভালো দাম থাকার কারণে একটু আগেই উত্তোলন করছেন। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার পেঁয়াজ চাষী মজিবর ও হালিম বলেন, পেঁয়াজের দাম বাজারে ভালো পাওয়ায় তারা পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন।
রাজবাড়ীতে পৈত্রিক জমি ও গাছপালা জবর দখলসহ বিক্রির অভিযোগ
এতে সামান্য ফলন কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় এতেই খুশি। সকাল থেকেই পেঁয়াজ উত্তোলন করে ক্ষেত থেকেই কেটে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। পেঁয়াজ উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত মিকাইল শেখ বলেন, কিছু কিছু চাষী যারা আগাম পেঁয়াজ রোপন করেছিলেন, তারাই এখন উত্তোলন করছেন।দাম ভালো থাকায় পেঁয়াজ উত্তোলন করে ক্ষেতে বসেই নারী শ্রমিকরা কেটে দিচ্ছেন, বস্তায় করে সরাসরি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছি।
এতে ভালো দাম থাকায় লাভবান। আজগর আলী শেখ বলেন, তাদের মতো অনেকেই পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী করলে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় তারা আগেই পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন। এখন ১শত টাকা কেজি হিসেবে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন। ক্ষেতে বসে পেঁয়াজ কাটার কাজে নিয়োজিত নারী আলেয়া বেগম, আর্জিনা বেগম, সুনিতা রানী বলেন, পরিবারের কাজ শেষ করে ৬০টাকা মন হিসেবে পেঁয়াজ কাটছেন।
র্যাবের অভিযানে বালিয়াকান্দি থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার
এতে একটু বাড়তি আয় হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় ৬০ টাকা দিলেও দাম কমলে তখন আবার কমে যাবে। বহরপুরের চাষি তোফাজ্জেল ফকির বলেন, তিনি ১৮ পাকি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছে। এক পাকি (১পাকি সমান ২২শতাংশ) জমিতে খরচ হয়েছে ২০- ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে ৪০-৫০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। লালতীর ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেছেন।
কিছুদিন পর পেঁয়াজ জমিথেকে উঠানো হবে। এখন সেচ,সার, কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। বাজারে এখনপেঁয়াজের দাম ভালো আছে। তবে চিন্তার কারণ হচ্ছে জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করে সরকার।
নিশিকান্ত বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজ রোপণের পর একবার সেচ, নিরানী, সার দিয়েছি। এখন আবারও দিচ্ছি যেন পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়। সার ওষুধের দাম থাকার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। গত বছর ৭-৮শত টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান হয়েছে। এবছর ফলন ভালোই হবে আশা করছি। এত খরচ করেও যদি দাম না পাওয়া যায় তাহলে কৃষক মারা পড়বেন।
চাষী মোঃ মজনু মন্ডল বলেন, তিনিও কিছু পেঁয়াজ উত্তোলন করেছেন। এতে লাভ হয়েছে। আর যারা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন তাদের বিঘায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি ১ হাজার থেকে ১৫ শত টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় লোকসানে পড়বেন। বর্তমানে যে বাজার দর আছে এ বাজার থাকলে লাভবান হবেন।
সরকারের কাছে তার আবেদন ভারত থেকে যেন পেঁয়াজ আমদানি না করে। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হবে।
মন্ত্রিসভায় শপথের জন্য ডাক পেলেন ৭ জন
বর্তমান বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হবে জেলায়। তিনি বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন মৌসুমে আমদানি করা হয় না। সংকট দেখা দিলে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
পেঁয়াজ কত উৎপাদন হয়েছে, আর চাহিদা কত এ হিসাব করেই পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কৃষকদের শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভালো দাম পেয়েছেন, হালি পেঁয়াজেও ভালো দাম পাবেন। সে ক্ষেত্রে শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কৃষকেরা লাভবান হবেন।